প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম জানা আবশ্যক। কেননা, নামাজ বেহেস্তের চাবি। কাজেই ভালভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম কানুন জেনে নিলে নামাজ আদায়ে কোনো ত্রুটি থাকবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম নিচে আলোচনা হলো।
নামাজ কি?
নামাজ হল ইসলামের ৫টি মূল খুঁটির একটি। ঈমানের পরেই নামাজের স্থান। ফরজ ইবাদাতের মধ্যে সবোর্ত্তম ইবাদাত হল নামাজ। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। নামাজ ব্যতিরেকে কোনো আমলই মহান আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। রাসূল (সা) বলেছেন- ‘নামাজ হলো বেহেস্তের চাবি।’ আজ নামাজ পড়ার পদ্ধতি ও নিয়ম-কানুন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব।
নামাজের ফরজসমূহ
নামাজের মধ্যে রয়েছে ১৩টি ফরজ। এর মধ্যে নামাজের বাইরে ৭টি ও ভিতরে ৬টি ফরজ আছে। এই ফরজ আদায় না করলে নামাজ ফাছিদ (ভঙ্গ) হয়ে যাবে। কাজেই এই ফরজগুলো জানা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক।
নামাজের বাইরের ৭টি ফরজ বা আহকাম
১। শরীর পবিত্র থাকা
২। কাপড় পবিত্র থাকা
৩। নামাজের স্থান পবিত্র থাকা ( মারাকিল ফালাহ-২০৮)
৪। সতর ঢাকা ( মারাকিল ফালাহ-২১০)
৫। কেবলামুখী হওয়া ( মারাকিল ফালাহ-২১১)
৬। ওয়াক্ত হলে নামাজ পড়া
৭। নিয়ত করা ( মারাকিল ফালাহ-২১৫)
নোট: নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব।
নামাজের ভিতরের ৬টি ফরজ বা আরকান
১। তাকবিরে তাহরিমা ( আল্লাহু আকবার) বলা
২। কিয়াম করা
৩। ক্বিরাত পড়া
৪। রুকু করা
৫। দুই সেজদা করা
৬। শেষ বৈঠকে তাহাহুদ পড়ার সময় বসা। (হেদায়া-১/৯৭)
নামাজের ওয়াজিব
নামাজ আদায়ের সময় যদি কোনো ওয়াজিব ছুঁটে যায় মানে ওয়াজিব তরক হয়ে যায় তাহলে ‘সাহু সিজদা’ দেয়া ওয়াজিব হয়ে পড়ে।
নামাজের ওয়াজিবসমূহ
১। তাকবিরে তাহরিমার সময় আল্লাহু আকবার বলা (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/২৭৮)
২। সুরা ফাতেহা পড়া
৩। সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানো
৪। ফজর নামাজের প্রথম দুই রাকাত ক্বিরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা
৫। ক্বিরাতের পূর্বে সূরা ফাতিহা পড়া
৬। সূরা ফাতিহা একাধিকবার না পড়া (হিন্দিয়া-১/১২৮)
৭। যেহরী (উচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়া হয় এমন) নামাজে উচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়া
৮। সিররী (অনুচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়া হয় এমন) নামাজে অনুচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়া।(ফাতাওয়া শামী-২১৫)
৯। নামাজের রোকনসমূহ ধীরস্থিরভাবে আদায় করা ( হিন্দিয়া-১/১২৯)
১০। রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো (শামী-২/১৫৮)
১১। সিজদার মাঝে কপাল ও নাক জমিনের সাথে লাগিয়ে রাখা। (শামী-২/২০৪)
১২। প্রত্যেক রাকাতে এক সিজদার পর অপর সিজদা করা (শামী -২/১৫৩)
১৩। উভয় সিজদার মাঝে বসা। (শামী-২/১৫৮)
১৪। প্রথম বৈঠক করা (চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে দু’রাকাত পড়ার পর) । (বাদায়েউস সানায়ে-১/৩৯৯)
১৫। প্রথম বৈঠক ও শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া। (শামী -২/১৫৯)
১৬। প্রথম বৈঠকের পরে বিলম্ব না করে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো । (মারাকিল ফালাহ-১৩৬)
১৭। নামাজের ক্রিয়াসমূহের মাঝে তারতীব রক্ষা করা। (হালবী কাবীর-২৯৭)
১৮। সালাম শব্দ দ্বারা নামাজ শেষ করা। (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/১৬২)
১৯। বেতের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া। (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/১৬৩)
২০। দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা। (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/১৬৩)
২১। দুই ঈদের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর বলা। (মারাকিল ফালাহ-৯৩)
নামাজের সুন্নাতসমূহ
১। ফরজ নামাজের জন্য আজান ও ইকামত বলা।(আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/৪৮)
২। তাকবিরে তাহরিমার সময় উভয় হাত উঠানো।(তানভীরুল আবসার মাআ শামী-২/১৮২)
৩। হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক রাখা। (ফাতাওয়া শামী-২/১৭১)
৪। ইমামের জন্য তাকবীরগুলো উচ্চস্বরে বলা।(হিন্দিয়া-১/১৩০)
৫। সানা পড়া।(বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭১)
৬। ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়া।(বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭২)
৭। ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া। (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭৪)
৮। অনুচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলা। (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭৩)
৯। সানা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ইত্যাদি অনুচ্চস্বরে বলা। (হিন্দিয়া-১৩১)
১০। হাত বাঁধার সময় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা।(হিন্দিয়া-১/১৩১)
১১। পুরুষের জন্য নাভির নিচে, আর মহিলার জন্য বুকের উপর হাত বাঁধা।(হিন্দিয়া-১/১৩০)
১২। এক রোকন থেকে অন্য রোকনে যাবার সময় “আল্লাহু আকবার” বলা।(বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৮৩-৪৮৯)
১৩। একাকী নামাজ পাঠকারীর জন্য রুকু থেকে উঠার সময় “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা” ও “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলা। ইমামের জন্য শুধু “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা” বলা আর মুক্তাদির জন্য শুধু “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলা।(মারাকিল ফালাহ-২৭৮)
১৪। রুকুতে “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” বলা।(বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭৮)
১৫। সেজদায় বলা “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা”। (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৯৪)
কোরআন ও হাদিসের আলোকে সাহাবীদের মর্যাদা সম্পর্কে জানতে ভিজিট
১৬।রুকুতে উভয় হাটু আঁকড়ে ধরা। (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৮৭)
১৭। রুকুতে পুরুষের জন্য উভয় হাতের আঙ্গুল ফাঁকা রাখা। আর মহিলার জন্য মিলিয়ে রাখা। (শামী-২/১৭৩)
১৮। পুরুষের জন্য নামাজে বসার সময় বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা ও ডান পা খাড়া রাখা এবং আঙ্গুলগুলো কেবলার দিক করে রাখা। আর মহিলার জন্য উভয় পা ডান দিকে বের করে জমিনের উপর বসা।(বাদায়েউস সানায়ে-১/৪৯৬)
১৯। শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুরুদ শরীফ পড়া।(বাদায়েউস সানায়ে-১/৫০০)
২০। দুরুদের পর দোয়া পড়া। (হিন্দিয়া-১/১৩০)
২১। তাশাহুদে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার সময় শাহাদাত (তর্জনি) আঙ্গুল দ্বারা কেবলার দিকে ইশারা করা। (বাদায়েউস সানায়ে-১/৫০১-৫০২)
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে ১৩ প্রকার শারীরিক উপকারীতা রয়েছে। নিচের ভিডিওটি দেখেন-
নামাজের মুস্তাহাবসমূহ
১। দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার স্থানের দিকে, রুকু অবস্থায় উভয় পায়ের পাতার উপর, সেজদার সময় নাকের দিকে, বৈঠকের সময় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা।(বাদায়েউস সানায়ে-১/৫০৩)
২। তাকবীরে তাহরিমা বলার সময় হাত চাদর থেকে বাহিরে বের করে বলা।
৩। সালাম ফিরানোর সময় উভয় কাঁধের উপর দৃষ্টি রাখা।(মারাকিল ফালাহ-১৫১)
৪। নামাজে মুস্তাহাব পরিমাণ ক্বিরাত পড়া। অর্থাৎ (ফজর ও যোহর নামাজে ‘তিওয়ালে মুফাস্যাল’- সূরা হুজরাত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত।আছর ও ইশার নামাজে ‘আওসাতে মুফাস্যাল’- সূরা তারেক থেকে সূরা বাইয়্যিনা পর্যন্ত। মাগরীবের নামাজে ‘কিসারে মুফাস্যাল’- সূরা যিলযাল থেকে শেষ পর্যন্ত সূরাগুলোর যেকোনটি তিলাওয়াত করা) (ফাতাওয়া শামী-২/২৬১)
৫। জুমআর দিন ফজরের নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা আলিফ-লাম-মিম সেজদা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা দাহর পড়া।(ফাতাওয়া শামী-২/২৬৫)
৬।যথা সম্ভব কাশি ও ঢেকুর চেপে রাখা।(ফাতাওয়া শামী-২/১৭৬)
৭। হাই আসলে মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা।(ফাতাওয়া শামী-২/১৭৭)
অনলাইনে একদম ফ্রিতে ইনকাম করার পদ্ধতি শিখতে ভিজিট করুন
মো: নজরুল ইসলাম, ০১৭১৬৩৮৬৯৫৮