বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত সম্পর্কে লেখা আমালিয়াত হচ্ছে একটি আমলের কিতাব। বিভিন্ন ভাষায় রচিত কিতাবসমূহ হতে বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত নিয়ে আমালিয়াত ১ম খন্ড নামক কিতাবে লেখা হয়েছে।
লেখক: হযরত মাওলানা ক্বারী মো: নজরুল ইসলাম সাহেব, ভাদেশ্বরী। (এমএম, এমএ)
(আমালিয়াত) প্রথম খন্ড, প্রথম অধ্যায় শুরু
বিশেষ দ্রষ্টব্য: সময়ের স্বল্পতাহেতু সকল আয়াত বা বাক্যের হরকত দেয়া সম্ভব হয়নি।
ইনশাহ আল্লাহ ধীরে ধীরে প্রতিটি আয়াত বা বাক্যের হরকত সংযোজন করা হবে তথা যের, যবর, পেশ সংযোজন করা হবে। তাই আপডেট পেতে সাথে থাকুন।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم এর ফজিলত ও আমল
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” কোরআন শরীফের সূরা নামলের একটি আয়াত বা অংশ। সূরা তাওবা ব্যতীত প্রত্যেক সূরার প্রথমে এই আয়াত লেখা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (র) বলেন- ‘এটা এমন একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আয়াত যা প্রত্যেক সূরার প্রথমে লেখা এবং দু’টি সূরার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে।’ কোরআন শরীফের স্থানে স্থানে উপদেশ রয়েছে যে, প্রত্যেক কাজ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে আরম্ভ কর। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘যে কাজ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” ব্যতীত আরম্ভ করা হয়, তাতে কোন বরকত থাকে না।’ এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ঘরের দরজা বন্ধ করতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলবে, বাতি নেভাতেও “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলবে, পাত্র আবৃত করতেও “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলবে। কোনো কিছু খেতে, পানি পান করতে, ওযু করতে, সওয়ারীতে আরোহণ করতে এবং তা থেকে অবতরণকালেও “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলার নির্দেশ কোরআন-হাদিসে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী)
রাসুল (সা) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম তিলাওয়াত করে, আল্লাহপাক তাঁর জন্য দশ হাজার নেকি লিখেন এবং দশ হাজার বদী মার্জনা করেন এবং দশ হাজার উচ্চ মর্যাদা দান করেন।” অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি একবার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে, তাঁর সমস্ত গোনাহের মধ্যে এক বিন্দু গোনাহও বাকি থাকে না। মোহাদ্দিগণ উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- এই হাদিসে যে গোনাহের কথা উল্লেখিত হয়েছে তা হল ছগিরা গোনাহ।
অনলাইনে একদম ফ্রি পদ্ধতিতে ইনকাম করা জানতে ভিজিট করুন
একটি ঘটনা
রূহুল বয়ানের তাফসীরকারক স্বীয় তাফসীরে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আলোচনায় একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন- যখন হুযুর আলাইহিস সালাম মি‘রাজে তাশরীফ নিলেন এবং জান্নাতসমূহে ভ্রমণ করলেন তখন চারটি নহর (প্রস্রবন) বা প্রবাহমান নদী পরিদর্শন করেন । এগুলো হলো-
১. পানির প্রস্রবণ।
২. দুধের প্রস্রবণ
৩. শরাব বা পানীয় এর প্রস্রবণ
৪. মধুর প্রস্রবণ
হুযুর আলাইহিস সালাম জিব্রাঈল আমীনকে জিজ্ঞেস করলেন, এ নদীগুলো বা প্রস্রবণগুলো কোথা থেকে এসেছে? হযরত জিব্রাঈল (আ) আরয করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! আমি এ সম্পর্কে অবহিত নই। অন্য আরেকজন ফেরেস্তা এসে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! এ চারটি প্রস্রবণ আমি দেখাচ্ছি। তিনি হুযুর আলাইহিস সালামকে একটি স্থানে নিয়ে গেলেন। সেখানে একটি বৃক্ষ ছিল যার নিচে একটি দালান তৈরি হয়েছিল। এবং দরজার ওপর তালা ঝুলছিল এবং এই দালানের নিচ থেকে এ চারটি নহর প্রবাহিত হচ্ছিল। হুযূর আলাইহিস সালাম এরশাদ করলেন- দরজা খুলো। ফেরেস্তা আরয করলেন, এর চাবি আমার কাছে নেই; বরং আপনারই কাছে রয়েছে। এই দালান খোঁলার চাবি হল “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। হুযূর আলাইহিস সালাম “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে তালায় হাত স্পর্শ করলেন, দরজা খুঁলে গেল। তিনি ভেতরে গিয়ে পরিদর্শন করে দেখলেন যে, সেই দালানে চারটি খুঁটি রয়েছে। আর প্রতিটি খুঁটিতে লেখা রয়েছে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। بِسْمِ اللَّه এর م থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং اللَّه ইসিমের ه থেকে দুধ বের হচ্ছে। الرَّحْمَن এর م থেকে শরাব এবং الرَّحِيم শব্দের م থেকে মধু রেব হচ্ছে। ভেতর থেকে শব্দ আসছে- হে আমার মাহবুব! আপনার উম্মতের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়বে, সে এই চারটি নি‘য়ামতের হকদার হবে।
হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত আছে, যে সময় কোনো ব্যক্তি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে তখন শয়তান এমনভাবে গলে যায় যেভাবে সীসা গলে যায়।
শায়েখ আবুল আব্বাস আহমদ বিন আলী বুনি (র) তাঁর লিখিত বিখ্যাত কিতাব “শামছুল মোয়ারিফুল কোবরা” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, আল্লাহ তা’য়ালা কোরআন, তাওরাত, যবুর ও ইঞ্জিলসহ মোট ১০৪ খানা আসমানি গ্রন্থ নাজিল করেন। এই সকল আসমানি গ্রন্থের সমষ্টি হল কোরআনুল কারিম। আর কোরআনুল কারিমের সমষ্টি অর্থাৎ সমুদয় নিয়ামত ও বরকত জমা রয়েছে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এর মধ্যে। আর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এর সম্পূর্ণ নিয়ামত ও বরকত লুকিয়ে রাখা হয়েছে ب হরফের মধ্যে। যার অর্থ এই যে, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
بى ماﹶ كان و بى ما يكوُن
এ জন্যই হাদিস শরীফে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াতকে কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত বলা হয়েছে।
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর মধ্যে মোট ১৯টি হরফ। আর দোজখ রক্ষাকারী সরদার ফেরেস্তাও ১৯ জন। যে ব্যক্তি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে, সে উক্ত সরদার ফেরেস্তাদের সব রকম আজাব হতে মুক্তি লাভ করবে।
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, দোজখের দারোগা ফেরেস্তার নাম মালেক। তিনি যখন কোনো ফেরেস্তাকে দোজখের বিভিন্ন প্রকোষ্টের মধ্যে কোনো ব্যক্তির নতুন কোনো আজাবের ব্যবস্থা করার জন্য পাঠাবেন, তখন মালেক ফেরেস্তা উক্ত ফেরেস্তার কপালে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখে দিবেন। তখন দোজখের আগুন ঐ ফেরেস্তার দেহে কোনো ক্রিয়া বা ক্ষতি করবে না। অর্থাৎ দোজখের আগুন ঐ ফেরেস্তার গায়ে লাগবে না ।
হযরত সুলাইমান (আ) যখন বিলকিছকে প্রথম চিটি লিখেছিলেন, সেখানে তিনি লিখেছিলেন-
اِنّهُ مِن سُليمان و اِنّهُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم ٠
(সূরা নমল:আয়াত-৩০)
কাজেই এই বিসমিল্লাহর বরকতে বিলকিছ সুলাইমান (আ) এর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন এবং বিলকিছের পুরা ইয়ামান রাজ্য হযরত সুলাইমান (আ) এর আয়ত্বে এসেছিল।
তাফসীরে কবীরে উল্লেখ আছে, আল্লাহ তা’য়ালা কোনো এক নবীকে জানান যে, কোনো ব্যক্তি জীবনে ৪ হাজার বার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করেছে বলে তাঁর আমলনামা সাক্ষ্য দিলে শেষ বিচারের দিন আরশের নিকট তাঁর পতাকা স্থাপন করা হবে।
দুররুল মুখতার এ বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তির মৃত্যূর পর তাঁর কপালে ও বুকে (আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিতে) “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখে দেয়া হলে এর বরকতে তিনি কবরের আযাব হতে রেহাই পেয়েছিলেন।
তাফসীরে আযীযীর মধ্যে বর্ণিত আছে, এক ওলী আল্লাহ তাঁর কাফনে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখে দেয়ার ওসিয়ত করলে তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হয়। উত্তরে তিনি বলেন যে, শেষ বিচারের দিন তিনি করুনাময় আল্লাহর দরবারে তাঁর রাহমান ও রাহিম নামের যথার্থ মূল্য দাবি করতে পারবেন।
আরেকটি ঘটনা
তাফসীরে কাবীর শরীফের মধ্যে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আলোচনায় তাফসীরকারক লিখেছেন-ফেরআউন তাঁর খোদায়িত্বের দাবীতে প্রথমে একটি ঘর বানিয়েছিল। আর এই ঘরের বহির্দরজায় লিখেছিল “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। যখন সে খোদায়িত্ব দাবী করল এবং মুসা আলাইহিস সালাম তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন আর সে কবুল করল না। তখন মুসা (আ) তার ওপর বদ্ দোয়া করলেন। ওহী আসল, হে মুসা! এটাই ফায়সালা যে, তাকে ধ্বংস করে দেয়া হবে; কিন্তু তাঁর দরজায় (বিসমিল্লাহ) লেখা রয়েছে, যার কারণে সে বেঁচে গেল। এ জন্যই ফেরাউনের ঘরে আযাব আসল না; বরং সেখান থেকে বের করে সাগরে ডুবিয়ে দেয়া হল। একজন কাফিরের ঘর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর ওসীলায় বেঁচে গেল। সুতরাং যদি কোন মুসলমান স্বীয় অন্তরে ও মুখে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে নেয় তাহলে কেন সে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচবে না? অবশ্যই রক্ষা পাবে।
ওলামায়ে কেরামদের অভিমত হল “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর মধ্যে ইসমে আজম এতোই নিকটবর্তী যে, যেমন চোখের কালো ও সাদা অংশের মধ্যে দুরত্ব। বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
শামছুল মুয়ারিফুল কোবরায় আছে, হযরত আকরামা (রা) থেকে বর্ণিত যে, সর্ব প্রথম আল্লাহ তা’য়ালা একা ছিলেন। কোন কিছুই তখন ছিল না। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। তখন আল্লাহ তা’য়ালা সর্ব প্রথম নূর সৃষ্টি করলেন। তারপর লৌহ ও কলম সৃষ্টি করলেন এবং কলমকে হুকুম করলেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে তা লৌহের মধ্যে লিপিবদ্ধ কর। কলম লৌহের মধ্যে শুরুতেই লিখেছিল “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আদম (সা) এর উপর প্রথম নাজিল হয়। আদম সৃষ্টির সময় তাঁর পেশানীর উপর লিখা হয় “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। আদম (আ) এর ওফাতের পরই “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াতকে আসমানে তুলে নেয়া হয়। যখন হযরত ইব্রাহিম (আ) নমরুদের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হন, তখন আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিবরাঈল (আ) ইব্রাহিম (আ) এর উপর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” নাজিল করেন এবং নমরুদের অগ্নিকুন্ড ইব্রাহিম (আ) এর জন্য শান্তিদায়ক ঠান্ডায় পরিণত হয় এবং ফুলের বাগান তৈরি হয়। ইব্রাহিম (আ) এর ইন্তিকালের পর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াতটিকে আবারো আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়। “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” হযরত সোলেমান (আ) এর উপর নাজিল হয়। সোলেমান (আ) এর আংটির মধ্যে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখা ছিল। তার ইন্তিকালের পর আবার এটাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়। “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” হযরত মুসা (আ) এর উপর নাজিল হয় এবং মুসা (আ) এর লাঠির মধ্যে ছুরইয়ানী ভাষার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখাছিল। তার ইন্তিকালের পর এটা আবারো আসমানে চলে যায়। “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” হযরত ঈসা (আ) এর উপর নাজিল হয়। এমন কি হযরত ঈসা (আঃ) এর জিহবার মধ্যে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখিত ছিল। যে কারণে তিনি জন্মের পরই কথা বলেছিলেন। অবশেষ মহানবী (সাঃ) এর উপর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” নাজিল হয় এবং আল্লাহ তা’য়ালা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” কে কিয়ামত পযর্ন্ত দায়িম ও কায়িম রাখেন। এজন্য কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ পযর্ন্ত আমরা “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াত হতে ফায়েদা হাসিল করতে থাকব।বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
একটি চমংকার ঘটনা
তাফসীরে কাবীর শরীফের তাফসীরকারক “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আলোচনায় একটি চমংকার ঘটনা লিপিবিদ্ধ করেছেন যে, একজন ভিক্ষুক একজন বড় সম্পদশালী ব্যক্তির দ্বারপ্রান্তে আসল এবং কিছু চেয়ে বসল আর সেই আলীশান দরবার থেকে সামান্য কিছু জিনিস পেল। ফকীর তা নিল এবং চলে গেল। দ্বিতীয় দিন সেই ফকীর একটি খুব শক্ত কোদাল নিয়ে আবার আসল এবং দরজা কুঁড়তে লাগল। মালিক বললেন, তুমি একি কাজ করছ? ফকীর বলল, হয়তো দান-খয়রাতকে দরজার সমমর্যাদাপূর্ণ উপযুক্ত করুন, না হলে দরজাকে দান-খয়রাতের সমমানের করুন। অর্থাৎ দরজা যেহেতু এত বড় বানিয়েছেন সুতরাং এর উপযুক্ত মর্যাদা হল বড় দরজা থেকে বড় ভিক্ষাই বের হবে। কেননা, দান-খয়রাত ইত্যাদি দরজা ও নামের উপযুক্ত হওয়া চাই। আমরাও আল্লাহর দরবারে আরয করি যে, হে মাওলা! আমাদেরকে আমাদের ফকীরের মর্যাদা অনুযায়ী দিওনা; বরং আপনার দান বখশিশের মর্যাদা অনুযায়ী দিও। নিঃসন্দেহে আমরা পাপী কিন্তু আপনার ক্ষমাশীলতা আমাদের পাপীত্বের চেয়েও বড়।
তাফসীরে কাবীরের শুরুতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আলোচনায় রয়েছে যে, মহান আল্লাহর ৩ হাজার নাম রয়েছে। তা থেকে ১ হাজার নাম ফেরেস্তারা জানেন, ১ হাজার নাম আম্বিয়া-ই কিরাম জানেন, অবশিষ্ট ১ হাজার নামের মধ্যে ৩০০ টি নাম তাওরাতের মধ্যে, ৩০০টি নাম ইঞ্জিলের মধ্যে, ৩০০টি নাম যাবুরের মধ্যে উল্লেখিত হয়েছে। আর নিরানব্বইটি নাম কোরআন মজিদের মধ্যে রয়েছে। আর একটি নাম তাই যা শুধু মহান আল্লাহই জানেন। তবে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর মধ্যে মহান আল্লাহর যে ৩টি নাম এসেছে এই ৩টির মধ্যে সেই ৩ হাজার নামের অর্থ পাওয়া যায়।বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
একটি জ্ঞানগর্ভ আলোচনা
রাহমান ও রাহীম শব্দদ্বয়ের অর্থ
রুহল বয়ান ও তাফসীরে কাবীরে বিশ্লেষন করা হয়েছে যে, রাহমান হচ্ছেন তিনিই যিনি কোন মাধ্যম ব্যতিরেকে রহম বা দয়া প্রদর্শন করেন। আর রাহীম হচ্ছেন তিনি যিনি কোন মাধ্যম দ্বারা বান্দাদেরকে করুণা করেন। হযরত যুননুন মিশরী (র) বলেন- একদিন আমি নীল নদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। প্রতি মধ্যে দেখলাম যে, একটি বিচ্ছু দ্রুত নদীর দিকে এগুচ্ছে। বিচ্ছুটি যখন নীল নদের ধারে পৌছালো হঠাৎ একটি কচ্ছপ নদীর ধারে আসল। বিচ্ছুটি এর উপর সওয়ার হল আর কচ্ছপ একে বহন করে নদীর এপার থেকে ওপারে নিয়ে গেল। আমার এ বিষয়টি জানার জন্য আগ্রহ জাগল যে, আমি দেখব, এ কচ্ছপটি বিচ্ছুটিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। অত:পর আমি নৌকা দিয়ে কচ্ছপকে অনুস্বরণ করতে লাগলাম। দেখলাম যে, বিচ্ছুটি যখন ওপারে গিয়ে পৌছল তখন কচ্ছপ লেকে নেমে গিয়ে সামনের দিকে দ্রুত গতিতে চলতে লাগল। আমিও তার অনুস্বরণ করতে লাগলাম। কিছু দুর গিয়ে দেখলাম একটা যুবক ঘুমাচ্ছে এবং তারপাশে একটা বিশধর সাপ। যুবকটিকে সাপে দংশন করতে চাচ্ছিল। এমতাবস্থায় বিচ্ছুটি সাপটিকে আক্রমন করল আর সাপও বিচ্ছুটিকে পাল্টা আক্রমন করল। তারপর উভয়ই পরস্পরের আক্রমন ও দংশনের বিষে মারা গেল। কিন্তু যুবকটি বেঁচে গেল। আর এটাই হল ‘রাহীম’ নামের গুণের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এভাবেই আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে কোনো না কোনো মাধ্যমে সাহায্য করে থাকেন।
কেউ কেউ বলেন ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর মধ্যে যে ‘আল্লাহ’ শব্দ আছে, এটাই হল ইসমে আজম।বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াত শরীফের মাধ্যমে কিছু আমল
আল্লামা ইমাম জাফর সাদিক (র) ‘‘আমালিয়াত ও তাবিজাত’’ বিষয়ে জ্ঞানার্জনকারী ব্যক্তিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যা আবিষ্কার করেন। তিনি সে বিদ্যার নাম রাখেন ‘‘ইলমে জাফর’’। তাঁর এই বিদ্যার সুখ্যাতি সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং এই বিদ্যার মাধ্যমে কোন আমল বা তদবির করলে বন্দুকের গুলির মতো কাজ করত। ফলে এই বিদ্যা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে গোটা পৃথিবীতে। আল্লামা ইমাম জাফর সাদিকেই সর্ব প্রথম ‘‘সংখ্যা বিদ্যার” ব্যবহার করেন। আমরা যে, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর পরিবর্তে ৭৮৬ লিখে থাকি এটা হলো “ইলমে জাফর” বিদ্যারই অংশ। আমি “ইলমে জাফর” বিদ্যার উপর লিখিত বেশ কয়েকটি উর্দু কিতাব পড়েছি এবং আমার ধারণা খুবই সূদৃঢ় হয়েছে যে, জাফর বিদ্যায় যেমনি রয়েছে রুহানী শক্তি তেমনি রয়েছে ইলমী শক্তি। অর্থাৎ এই বিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তি “আমালিয়াত ও তাবিজাত” বিষয়ে রাজত্ব করে যেতে পারবেন এতে সন্দেহ করার কোন কারণ নেই। ইলমে জাফর বিদ্যার অতুলনীয় কিছু আমল ও তাদবীর এখানে লিখার খুবই ইচ্ছে ছিল কিন্তু আমি এটা আলাদাভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ কিতাব হিসেবে লিখতে আগ্রহী। তবে যদি আল্লাহপাকের হুকুম হয়, তাহলে চেষ্টা করব সামান্য কিছু আমল বা তদবীরের আলোচনা এই কিতাবেও করতে।
‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর উপকারীতা
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর অসংখ্য উপকারীতা রয়েছে। তাফসীরে কাবীর ও তাফসীরে আযীযী থেকে এখানে কতিপয় উপকারীতার বর্ণনা করছি-
১. যে ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর পাশে যাওয়ার সময় অর্থাৎ সহবাসের পূর্বে ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়বে তাতে শয়তান শরীক হবে না। এবং সেই সঙ্গমে যদি মায়ের গর্ভে সন্তান ধারণ নিশ্চিত হয়ে যায় তাহলে জরায়ুতে সেই ধারণকৃত বাচ্চার জীবনে যে পরিমাণ শ্বাস নিবে সেই পরিমাণ সওয়াব ও কল্যান তার পিতার আমল নামায় লিপিবদ্ধ হবে।বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
২. যে ব্যক্তি কোনো প্রাণীর উপর আরোহণ করার সময় বিসমিল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ পড়ে নিবে তাহলে সেই প্রাণীর প্রতিটি কদমের জন্য সেই আরোহীর অনুকূলে একটি সওয়াব বা কল্যান লিপিবদ্ধ হতে থাকবে।
৩. যে ব্যক্তি কোনো নৌ-যানে আরোহণ করার সময় বিসমিল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ পড়ে নিবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে সেই আরোহণে বর্তমান থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য পূণ্য ও কল্যান লিপিবদ্ধ হবে।
৪. যে রোগী ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে ঔষধ সেবন করবে ইনশা আল্লাহ তার উপকার হবে।
একটি হেকায়েত
একবার হযরত মূসা (আ) এর পেটে খুব ব্যথা হল। মহান আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন, হে আল্লাহ! আমার ব্যথা কমিয়ে দিন। এরশাদ হল, অরণ্যের অমুক দানা খাও। সুতরাং তিনি সেই দানা খেলেন এবং সাথে সাথে রোগ আরোগ্য হয়ে গেল। কিছুদিন পরে তিনি সেই রোগে আবার আক্রান্ত হলেন। মুসা (আ) তখন পূর্বের ঔষধ সেবন করলেন। কিন্তু ব্যথা তো কমলো না বরং আরো বেড়ে গেল। মহান আল্লাহর দরবারে মুসা (আ) আরজ করলেন- হে আল্লাহ! এ কি রহস্য! ঔষধ এক কিন্তু প্রভাব দু’ধরণের । প্রথমবার এই ঔষধ আরোগ্য দান করল কিন্তু দ্বিতীয় বার রোগ বাড়িয়ে দিল। আল্লাহ বললেন, হে মুসা! সেই বার তুমি আমার পক্ষ থেকে দানার কাছে গিয়েছিলে। আর এবার তুমি তোমার পক্ষ থেকে সেবন করেছ। হে মুসা! শিফা বা আরোগ্য তো আমারই নামের বরকতের মধ্যে নিহিত। আমার নামের বরকত ব্যতীত পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসই ধংসকারী বিষতুল্য। আর আল্লাহর নাম হল প্রতিষেধক।বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর কিছু উপকারীতার কথা অন্যান্য কিতাব থেকে নিচে বর্ণনা করছি-
১. ৭দিন পর্যন্ত ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” ৭৮৬ বার কোন রোগীর উপর পড়ে দম করলে উক্ত রোগীর রোগ আরোগ্য হয়।
২. ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” ৫০ বার পড়ে কোনো জালিমের মুখে দম করলে জালিমের জুলুম থেকে নাজাত পাওয়া যায়।
৩. ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” প্রতিদিন ৭৮৬ বার পড়লে সকল প্রয়োজনীয়তা পুরা হয়।
৪. ঘুমানোর সময় ৫০ বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠকারীকে আল্লাহ তা’য়ালা সব রকম বালা-মুসিবত হতে হেফাজতে রাখেন।
৫. কোনো বিশেষ রোগীর উপর ৩দিন পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে দম করলে রোগী আরোগ্য লাভ করে।
৬. মৃগী রোগীর কানে ৪০ বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে দম করলে তার পাগলামী ভাল হয়।
৭. বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি অথবা কষ্টের মধ্যে আবদ্ধ অথবা লাল দাগ বিশিষ্ট রোগীর উপর ৩দিন ব্যাপী ১০০০ বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে দম করলে মুক্তি পাওয়া যায়।
৮. কয়েদী অথবা বন্ধ করে রাখা ব্যক্তির মুক্তির উদ্দেশ্যে ৭৮৬ বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়লে কয়েদী থেকে মুক্তি হওয়া যায়।
৯. জুম্মার দিনে ১২৩ বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে আল্লাহ তা’য়ালার নিকট দুনিয়া অথবা আখেরাতের মঙ্গলের জন্য যে প্রার্থনা করবে, আল্লাহপাক এই দোয়া পূর্ণ করে দিবেন।
১০. ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর হরফগুলোর বিশ্লেষণ করে এর সংখ্যার হিসেব মোতাবেক কিছু পানিতে পড়ে দম করে যাকে ভালবাসতে চাও, তাকে ঐ পড়া পানি পান করালে সে তোমাকে ভালবাসতে আরম্ভ করবে।
১১. কোন বরতনের উপর ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখে পানিতে ধৌত করে মেধাহীন ব্যক্তি পান করলে তার মেধাশক্তি ও মুখস্ত শক্তি বাড়বে।
১২. যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিদিন ১৫০ বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের গোপন রহস্য ও বাতিনি ভেদসমূহ অবগত হওয়ার জ্ঞান দান করবেন।
১৩. চল্লিশ দিন পর্যন্ত ফজরের নামাজের পর প্রতিদিন ১০০০ বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠকারীর কশফ খুঁলে যায় এবং আল্লাহর ইলহাম অবগত ও জ্ঞানের তথ্য ভান্ডার এবং যা কিছু দুনিয়ার মধ্যে সংঘঠিত হয় এই সব কিছু দেখতে পায়, অর্থাৎ তার ইলমের মধ্যে প্রকাশিত হয়ে যায়। বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
১৪. পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর ২৫০০ বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠকারীকে প্রত্যেক জিনিসের সংঘটিত ঘটনাবলি বুঝার শক্তি প্রদান করা হয়ে থাকে।
১৫. যদি কাউকে শাস্তি দিতে চান তাহলে এক সপ্তাহ এশার নামাজের পর (বেতর নামাজের আগে) ১২ রাকাত নফল নামাজ এই নিয়মে পড়বেন যে, প্রত্যেক রাকাতে আয়াতুল কুরসী ১০ বার, সূরা মাউন ১০ বার, সূরা এখলাছ ১০ বার, সূরা ফালাক ১০ বার, সুরা নাছ ১০ বার, এভাবে ১২ রাকাত নামাজ শেষ করবেন। ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বিশ্লেষণ করে তার হরফের সংখ্যার মোয়াফিক “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়বেন। তারপর ১০০০ বার দুরুদ শরীফ পড়ার পর বেতর নামাজ পড়বেন এবং এই আমল ৭দিন পর্যন্ত করবেন। ৭ম রাতে ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” রেশমী কাপড়ে লিখে নিজের বাজুতে বাঁধবেন। যখন ১ থেকে শুরু করে ৭০ জন লোকের সাক্ষাত হয়ে যাবে তখন (যাকে বা যাদেরকে শাস্তি দিতে ইচ্ছুক নিজের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করবেন। তাহলে এরা মাটিতে পড়ে যাবে। এরপর যাদেরকে উঠয়ে আনতে চাইবেন তাদের কানের মধ্যে ১ বার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করবেন তাহলে সে উঠে বসবে। আর মাটিতে পতিত ব্যক্তিরা খোঁড়া বা লেংড়া হয়ে যাবে। হাজত পুরা হওয়ার পর এই নকশা বাজু হতে খুলে আলাদা নিরাপদ ও পাক জায়গায় রেখে দিবেন। আবার প্রয়োজন হলে বাজুতে বাঁধবেন এবং শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
১৬. হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, কিয়ামতের দিন যে ব্যক্তির আলনামার মাঝে ৩০০ বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” ইয়াকিনের সাথে পাঠ করেছে বলে প্রমাণিত হবে আল্লাহ তা’য়ালা ঐ ব্যক্তিকে দোযখ থেকে মুক্তি দান করে জান্নাতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন।
অপর একটি ঘটনা
হযরত ঈসা (আ) একটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই কবরে শায়িত মৃতের ওপর চরম আযাব হচ্ছিল। এটা দেখে তিনি কিছু দূর এগিয়ে গেলেন। সেখান থেকে শৌচকর্ম সেরে ফেরার সময় আবার যখন সে কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন দেখলেন যে, কবরটিতে পরিপূর্ণ আলোয় ঝলমল করছে এবং সেখানে রহমতে এলাহীর বর্ষণ হচ্ছে। তিনি চরম আশ্চার্যান্বিত হলেন এবং আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন আমাকে এর রহস্য বলুন! ঘোষণা হল, হে রুহুল্লাহ! এই লোক চরম পাপী ও বদ অভ্যাসি ছিল। এজন্য সে আযাব ভোগ করছিল কিন্তু সে স্বীয়-স্ত্রীকে গর্ভাবস্থায় রেখে এসেছিল। তার একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিয়েছে এবং আজ তাকে মক্তবে পাঠানো হয়েছে। সে শিক্ষকের কাছে আজই প্রথম বার উচ্চারণ করেছে ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। তখনই আমার লজ্জা হচ্ছিল এবং মায়াও লাগল এই পাপী ব্যক্তির জন্য যে, কিভাবে আমি লোকটাকে কবরে আজাব দিব? কারণ, তার বাচ্চা জমিনে আমার নাম স্বরণ করেছে। তাই আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
এতে বোঝা গেল যে, বাচ্ছাদের সৎকর্মের ফলে মাতা-পিতাগণ আযাব হতে পরিত্রাণ পেয়ে থাকেন। বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
১৭. ইঞ্জিন শরীফে আল্লহ তা’য়ালা হযরত ঈসা (আ) কে নির্দেশ দিলেন যে, তুমি নামাজ ও ক্বিরাতের প্রথমে ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ো। কেননা যে ব্যক্তি এটা পড়বে সে মুনকার ও নাকির ফেরেস্তার আযাব থেকে হেফাজত থাকবে আর মৃত্যুর সময় সরকাতুল মউত তার উপর আসান হবে। আর তার জন্য কবর প্রশস্ত হবে এবং যখন কবর হতে উঠবে তখন তার শরীরের জন্য ঘোড়া পয়দা হবে এবং মুখ নুরের দ্বারা চমকাতে থাকবে আর নেকী বদীর হিসেব তার উপর সহজ করা হবে এবং তার আমলনামা ভারী হবে। এবং এই বিসমিল্লাহ শরীফের বদৌলতে জীবন চলার পথে ততক্ষণ পর্যন্ত আলো দান করবে যতক্ষন পর্যন্ত না পাঠকারীকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। এবং কিয়ামতের দিন মাগফিরাত নসিব হবে। হযরত ঈসা (আ) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! এই ফজিলত কাদের জন্য? উত্তরে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, এটা তোমার জন্য এবং যারা তোমার অনুস্বরণ করবে তাদের জন্য এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর উম্মতের জন্য। তারপর ঈসা (আ) তাঁর অনুসারীদেরকে ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” শিক্ষা দেন। কিন্তু যখন ঈসা (আ) আসমানে তাশরীফ নিলেন তখন তাঁর অনুসারীগণ অজ্ঞতার মধ্যে পড়ে গিয়ে ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” কে নষ্ট করে ফেলে।
১৮. শায়েখ আবু বকর সিরাজ (র) বর্ণনা করেছেন, যদি কেহ ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” ৬২৫ বার লিখে নিজের সঙ্গে রাখে তবে সকল লোকের মনে তাঁর প্রভাব বসে যাবে এবং কেহই তাঁর অনিষ্ট করতে পারবে না। পরীক্ষা করে এতে ফল পাওয়া গেছে।
১৯. তাফসীরে আযীযীর মধ্যে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোনো কঠিন বিপদে নিপতিত হবে সে যদি ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াতটিকে ১২ হাজার বার এই নিয়মে পাঠ করে যে, ১ হাজার তিলাওয়াতের পর ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিজের মাকছুদের জন্য দোয়া করবে। এই নিয়মে ১২ হাজার বার খতম করলে যত বড় মকছুদই হউক না কেন, খোদার ইচ্ছায় পুরা হবে। বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
২০. একদা রোমের বাদশা কায়ছার দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) এর নিকট মাথা বেদনার অভিযোগ জ্ঞাপন করত: এর এলাজ প্রার্থনা করেন। হযরত ওমর (রা) তাঁর জন্য একটি টুপি সেলাই করে পাঠিয়ে দিলেন। টুপিটি মাথায় রাখা মাত্রই বেদনা কমে গেল। কায়ছার আশ্চার্যান্বিত হয়ে টুপির সেলাই খুঁলে দেখলেন যে, তাতে লেখা রয়েছে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”।
২১. একবার ফকীহ্ মোহাম্মদ জমানী (র) জ্বরে আক্রান্ত হন। তাঁর উস্তাদ ফকীহ্ আলী উমর (র) তাঁকে দেখতে এসে একটি জ্বরের তাবিজ দিয়ে চলে গেলেন। যাবার সময় বলে গেলেন, খবদার! তাবিজটি খুঁলে দেখবে না। তাবিজটি ধারনা করা মাত্রই জ্বর সেরে গেল। ফকিহ মোহাম্মদ জমানী (র) এর কারণ তালাশের উৎসাহ দমন করতে না পেরে তাবিজ খুঁলে দেখেন যে, তাতে লিখা আছে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। তাবিজ খুঁলে দেখে ফেলার কারণে তাঁর মনে বিশ্বাসের শিতিলতা এসে যায় এবং জ্বর আবার ফিরে আসে। তখন তিনি তাঁর উস্তাদের নিকট গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আরেকটি তাবিজ চাইলেন। উস্তাদ ফকীহ্ আলী উমর (র) তাঁকে আরেকটি তাবিজ লিখে নিজ হাতে বেঁধে দিলেন। খোদার অনুগ্রহে তাবিজ বাঁধা মাত্র জ্বর সেরে গেল। এক বছর পর তিনি ভাবলেন যে, এখন দেখা যাক এই তাবিজটিতে কি লিখা আছে। খুঁলে দেখলেন তাতে লিখা আছে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। তখন তাঁর ভক্তি ও বিশ্বাসের অন্ত রইল না।
২২. তাফসীরে নাঈমীতে বর্ণিত আছে যে, হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা) এর নিকট এক ব্যক্তি বিষ নিয়ে আসল এবং বলল যদি আপনি এ বিষ পান করে সুস্থ থাকতে পারেন তাহলে আমি মেনে নিব যে, ইসলাম ধর্ম সত্য ধর্ম। হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা) তখন “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে সেই বিষ পান করে নিলেন। খোদার রহমতে এই বিষ পানে কোন ক্ষতি বা প্রতিক্রিয়া হল না। এমন কারামত দেখে লোকটি সাথে সাথে ঈমান কবুল করল।
আরেকটি হেকায়েত
এক ইহুদী রমনী বিষ মিশ্রিত খাদ্য নবী করীম (সা) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা) কে পরিবেশন করেছিল। মহানবী (সা) তা টের পেয়ে হুকুম দিলেন “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে খাও। অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম (রা) উক্ত গোশত খেলেন কিন্তু তাঁদের কারো কোনো ক্ষকি হয়নি।
হাদীস শরীফে আছে- “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে পানাহার শুরু না করলে শয়তান উক্ত খাদ্যবস্ত নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে।
একটি প্রশ্ন
কোনো কোনো লোক বলে থাকেন যে, আমরা হাজার বার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে থাকি কিন্তু কোন উপকার হয় না। অথচ হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা) “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে বিষ পান করে নিলেন; কিন্তু আমরা “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে কোনো ভারী খাবারও খেয়ে নিলে তাও আমাদের ক্ষতি হয়ে যায়। এর কি রহস্য হতে পারে?
জবাব
সমস্ত দোয়া ও ওজিফা কার্তুজের মতো আর পাঠকের মুখ বা জবান বন্দুকের মতো। কার্তুজ অবশ্যই সিংহকে আঘাত করে। আমরা আমাদের এ জবানে প্রত্যেহ মিথ্যা, গীবত ইত্যাদি করে থাকি সুতরাং সেই প্রভাব কোথা থেকে আসবে? যদি কোরআনুল কারীমের সেই প্রভাব দেখতে চান তাহলে ভাল জবান তৈরি করুন। একটি কথা অতিব সত্য, আর তা হলো- “খোদাকা কালাম হক হ্যায়” অর্থাৎ- আল্লাহর কালাম সত্য। আমরা সত্য নাও হতে পারি। বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
২৩. তাফসীরে নাঈমীতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তির সামনে কোন কঠিন ও বড় মুছিবত এসে যায় তখন সে নিন্মোক্ত ইবারতটি একটি কাগজে লিখবে-
بسم اﷲ الرحمٰن الرحيم٠ مِنﹶالعبد الذليل اليٰ رب الجليل -اني مسني الضر و انت ارحم الراحمين٠
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। মিনাল আ’বদিয্ যালিলে ইলা রাব্বিয্ যালিল। ইন্নি মাছছানিয়াদ্ দুররু ওয়া আনতা আর হামুর্ রাহিমীন।
অর্থাৎ আল্লাহর নামে আরম্ভ যিনি পরম দয়ালু ও করুনাময়। এ ফরিয়াদ অধমের পক্ষ হতে মহান রবের দরবারে এমনি যে, আমি কঠিন বিপদের সম্মুখীন আর তুমি হলে পরম সর্বাধিক দয়ালু। অতঃপর এ লিখিত কাগজের টুকরাটা কোন প্রবাহিত পানির মধ্যে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর নিচের দোয়াটি পড়বে-
اللٰهم بمحمد و اله الطيبين الطاهرين و اصحابه المرسلين٠ اقضي حاجتي يا اكرم الاكرمين٠
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিমুহাম্মাদিও ওয়ালা আলিহিত্ ত্বাইয়্যিবিনাত্ ত্বাহিরিনা ওয়া আছহাবিহিল মোরছালিন। ইক্বদী হা-জাতী, ইয়া আকরামুল আকরামীন।
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর উছিলায় এবং তাঁর পাক-পবিত্র বংশধরদের উছিলায় ও তাঁর প্রতিনিধীত্বকারী সাহাবীদের উছিলায় আমার চাহিদা পূরণ কর! হে সর্বাধিক দয়ালু। (হা-জাতী এর স্থলে আপনার উদ্দেশ্যে কি তা উল্লেখ করতে হবে।)
২৪. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” ৭৮৬ বার কোনো যাদুগ্রন্থ রোগীর উপর দম করলে সাথে সাথে এই যাদু বাতিল হয়ে যাবে। এইভাবে ৭৮৬ বার পড়ে আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করলে তা কবুল হবে। যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিদিন ১৫০ বার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” তিলাওয়াত করে আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের গোপন রহস্য ও বাতিনী ভেদসমূহ অবগত করবেন। যে ব্যক্তি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর অসংখ্য জিকির করবে তাঁর উচ্চস্থর ও নিম্নস্থরের যাবতীয় জ্ঞান অর্জিত হবে। বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
২৬. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর অপর বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত হল, দিবা রাত্র মিলিয়ে সর্বমোট ২৪ ঘণ্টা । এ থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই দখল করে নিয়েছে। আর ১৯ ঘণ্টার জন্য “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” কে যদি কেহ অজিফারূপে পাঠ করতে থাকে তাহলে এর প্রতিটি ঘণ্টা ইবাদতের মধ্যে গণ্য হবে এবং প্রতিটি সময়ে পাপ মোচন হবে। বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
২৭. হাজত পূরণের জন্য
যদি আপনি চান যে, আল্লাহ তা’য়ালা আপনার ইচ্ছা বা হাজত পূর্ণ করেন তবে সূরা ফাতেহা নিচের নিয়মে তিলাওয়াত করবেন। প্রথমে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে শেষ মিমে যের দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ কে ওছল করে অর্থাৎ মিলিয়ে পাঠ করুন। এই নিয়মে রবিবার ৭০ বার, সোমবার ৬০ বার, মঙ্গলবার ৫০ বার, বুধবার ৪০ বার, বৃহস্পতিবার ৩০ বার, শুক্রবার ২০ বার এবং শনিবার ১০ বার। (আনওয়ারুছ ছালিকিন) বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
আমিল হওয়ার জন্য করণীয়
আমিল হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন কিতাবে যে সকল বর্ণনা পাওয়া যায়, তা থেকে সহজ ভাষায় এ কথাই বলা যায় যে, কমপক্ষ ৩ চিল্লা অর্থাৎ ১২০ দিন ‘খালওয়াত’ করতে হবে। অর্থাৎ নির্জনতা অবলম্ভন করতে হবে। ‘খালওয়াত’ কিভাবে করবেন তার নিয়ম একটু পরে আলোচিত হবে। ধরুন, আপনি اللٰه يا ইসিমটির আমিল হওয়ার ইরাদা করলেন। তাহলে কিতাবের ভাষ্যমতে اللٰه শব্দে মোট ৪ টি হরফ আছে। এখন প্রশ্ন হল যে, কতবার এই ইসিমটি জপ করলে আমিল হওয়ার শর্ত পূর্ণ হবে। আল্লামা কাশিফ বর্ণী (রঃ) তাঁর লিখিত ‘আমিলে কামিল’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, ১ লক্ষ ২৫ হাজার বার ঐ ইসিম মোবারকটি জপ করলে আমিল হওয়ার শর্ত পূর্ণ হয়ে যাবে। এই হিসেবে প্রতিদিন ৩১২৫ বার করে জপ করলে ৪০ দিনে এক চিল্লা হবে। এভাবে তিন চিল্লা করতে হবে। কিন্তু এই ইসিমের যাকাত আদায় করার আরেকটি হিসেব আছে। যেটা অত্যন্ত কার্যকরী ও ফলপ্রসূ। আর তাহলো যেহেতু اللٰه ইসিমের মাঝে হরফ ৪টি। তাই ৪ সংখ্যাকে ৪ দিয়ে গুণ করে যে ফল বের হবে তাকে আবার ৪ দিয়ে গুণ করবে এভাবে ৭ গুণ করলে যে সংখ্যা বের হবে, সেটাই হবে আমিল হওয়ার জন্য পূর্ণ শর্ত বা তার পূর্ণাঙ্গ যাকাত। এটাকে ‘যাকাতে কুবরা’ বলা হয়। আমি বিষয়টিকে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
ধরুণ اللٰه শব্দে রয়েছে ৪টি অক্ষর। তাহলে ৪*৪=১৬, ১৬*৪=৬৪, ৬৪*৪=২৫৬, ২৫৬*৪=১০২৪, ১০২৪*৪=৪০৯৬, ৪০৯৬*৪=১৬৩৮৪, ১৬৩৮৪*৪=৬৫৫৩৬, ৬৫৫৩৬*৪=২৬২১৪৪ বার।
অতএব اللٰه ইসিমটির ‘যাকাতে কুবরা’ হল ২৬২১৪৪। কাজেই ‘আল্লাহ’ শব্দটিকে ২৬২১৪৪ বার জপ করলে আমিল হওয়ার শর্ত পূর্ণ হবে। আর ৪০ দিনের ভিতরে ২৬২১৪৪ বার জপ করা শর্ত। ইতেক্বাফ করার সময় ২৬২১৪৪ সংখ্যাটিকে ৪০ দিয়ে ভাগ করে আদায় করতে হবে। এভাবে তিন চিল্লা করতে হবে। (اللٰه اعلم) বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
খালওয়াত করার নিয়ম
কোনো নির্জন স্থানে বা কোনো নির্জন জঙ্গলে, ময়দানে, পাহাড়ে, প্রয়োজনে নিজ গৃহে বসে আমল শুরু করবেন এবং গৃহটি পবিত্র, কোলাহলমুক্ত, স্ত্রীসহবাসমুক্ত হতে হবে। প্রতিদিন রোজা রাখবেন এবং “তরকে হায়ওয়ানাত” (জালালী ও জামালী) করবেন। অর্থাৎ এই দিনগুলোতে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, দই, মাখন, পনির, মধু এবং কোনো ধরণের প্রাণী ভক্ষণ করা যাবে না। এছাড়া শরীরে কামের উদ্রেগ সৃষ্টি করে এমন কোনো আহার গ্রহন করা যাবে না। নিশা জাতীয় দ্রব্য যেমন-মদ, গাজা, তামাক, জর্দা সেবন করা চলবে না। চিল্লা চলাকালে শরীয়তের পরিপন্থি কোনো না জায়েদ কাজ করা যাবে না। হালাল খাদ্য গ্রহণ, মিথ্যা কথা বলা বর্জন, সব রকম গোনাহের কাজ হতে বিরত থাকাসহ শরীয়তের ফরজ, ওয়াজিব ও রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাতসমূহ যথাযথভাবে আদায় করে চলতে হবে। সারাক্ষণ অযুর সাথে থাকতে হবে। এ সময়ে উচ্চ স্বরে কথা বলা বন্ধ রাখতে হবে এবং বেশি বেশি করে আল্লাহ তা’য়ালার জিকির করবেন এবং আল্লাহর গযবের ভয়ে অধিক পরিমাণ কান্নাকাটি করবেন এবং হাঁসির পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। আমলের শুরুতে ১০০ বার আসতাগফিরুল্লাহ, ১০০ বার দুরূদ শরীফ ও আমল শেষে ১০০ বার দুরূদ শরীফ অজিফা আকারে পাঠ করতে হবে। চিল্লা আরম্ভ করার পূর্বে যাবতীয় গোনাহের উপর খাছ মনে তওবা করা আবশ্যক। অন্যথায় আমল ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। লাগাতার ১২০ দিন আমল করার পর আমলকারী ব্যক্তি এই বিষয়ের আমিল হয়ে যাবেন। আমলের তাছির হর-হামেশা বলবৎ রাখতে চাইলে প্রতিদিন ১১১ বার করে يا اللٰه ইসিমটি জপ করতে হবে। তা না করলে আমলের তাছির বা শক্তি আস্তে আস্তে কমে যাবে। পরিশেষে অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, আমল করার পূর্বে একজন কামিল ব্যক্তির ইজাজত নিয়ে তবেই আমল শুরু করবেন। তাহলে আর ফলাফল ব্যর্থ হওয়ার আশংকা থাকবে না এবং আমিল ব্যক্তির প্রাণ নাশেরও ভয় থাকবে না। (اعلم اللٰه) বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আমিল হওয়ার আমল
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াতের বদৌলতে আল্লাহ তা’য়ালার কামিল বান্দাগণ হাজার রকমের ফায়দা হাসিল করতে পারবেন। কিন্তু কামিল বান্দা ছাড়া অন্য কেউ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর গায়েবী সাহায্য হাসিল করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই বিসমিল্লাহ এর সাধনা করার মধ্যদিয়ে এর পূর্ণ শক্তি অর্জন করা আবশ্যক। আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রঃ) তাঁর লিখিত বেহেস্তি জেওর নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে, আমিল হওয়ার চেয়ে কামিল হওয়াই উত্তম। কেননা আমিল ব্যক্তিকে জ্বীন, পরী এবং অশুভ আত্মাসমূহ হাজারো ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে। এমনকি আমিল ব্যক্তির পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততিদের উপর আরোপিত হয়ে থাকে নানাবিধ বিপদ-আপদ। সে জন্য আমিল ব্যক্তিকে সর্বদাই থাকতে হয় সর্তক ও সচেতন । কিন্তু কামিল ব্যক্তির জন্য এ ধরনের বিপদের কোনো আশংকা থাকে না। কারণ, তাঁদের উপর থাকে আল্লাহপাকের খাস মেহেরবানী। যাই হোক, যদি কোনো ব্যক্তি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আমিল হতে চায়, তাহলে কমপক্ষে ৪০ দিনের চিল্লা প্রয়োজন। চন্দ্রমাসের প্রথম বৃহস্পতিবার অথবা সোমবার আমল শুরু করবেন। প্রতিদিন রোজা রাখবেন। নির্জন কোন স্থানে বা জঙ্গলে বা ময়দানে বা দরিয়ার কিনারে, প্রয়োজনে নিজ গৃহে বসে আমল করবেন। আমল চলাকালীন সময়ে হালাল খাদ্য গ্রহণ, মিথ্যা কথা বলা বর্জন, সব রকম গোনাহের কাজ হতে বিরত থাকাসহ শরীয়তের ফরজ, ওয়াজিব ও মহানবী (সাঃ) এর সুন্নাতসমূহ পুরোপুরিভাবে পালন করে চলবেন। মাছ, গোস্ত, ঘি, মাখন, দুধ, দধি, লবন ইত্যাদি খাবেন না। শুধু শাক-সবজি (নেমক ছাড়া) অথবা যবের বা আটার রুটি খাবেন। প্রতিদিন একই সময়ে আমল করবেন। যে কামরায় আলম করবেন তাতে সুগদ্ধি ব্যবহার করবেন এবং লোবান ও চন্দন কাঠ জ্বালিয়ে ধুনি দিবেন। আমল শুরু করার পূর্বে ১০০ বার আসতাগফিরুল্লাহ, ১০০ বার দুরূদ শরীফ এবং ৩১২৫ বার নিচের নিয়মে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” তিলাওয়াত করবেন। বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
اجب يا جبرائيل بحق بسم اللٰه الرحمٰن الرحيم٠
এবং আমল শেষে ১০০ বার আসতাগফিরুল্লাহ, ১০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে সমস্ত ছোয়াব মহানবী (সাঃ) এর খেদমতে রেছানী করবেন। তারপর হাত তুলে প্রাণ খুঁলে দোয়া করবেন যে, হে আল্লাহ! “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর মধ্যে যা কিছু নিয়ামত ও বরকত বিদ্যমান আছে, আমাকে দান করে আমার মনোবাসনা পুরা করে দাও! আরো নিজের মনের একান্ত কিছু থাকলে তাও প্রার্থনা করবেন। এভাবে ৪০ দিন আমল করার পর উক্ত ব্যক্তি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আমিল হয়ে যাবে। আমল চলাকালীন সময়ে অন্তত ১৯ বার উক্ত আয়াতে কারীমাটি লিখবেন। এতে আরো তাছির পয়দা হবে। চিল্লা যেদিন শেষ হবে সেদিন কিছু দান-খয়রাত করবেন। সম্ভব হলে ফকির-মিছকীনকে খাওয়াবেন। আমলের তাছির সর্বদা জারী রাখতে হলে প্রতিদিন ৭৮৬ বার করে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করতে হবে। (নকসে সুলাইমানী) বিসমিল্লাহ শরীফের ফজিলত
৩০টি দ্রব্যগুণন যাদু ও টোটকা বিদ্যা শিখতে ভিজিট করুন
যোগাযোগ
০১৭১৬-৩৮৬৯৫৮
nazruld@yahoo.com