রোজার ফজিলত ও নিয়ম জানা একজন মুসলমানের জন্য অত্যন্ত জরুরি। রোজা একটি ফরজ ইবাদাত। কাজেই রোজার ফজিলত ও নিয়ম ভালভাবে জানা আবশ্যক। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল।
চান্দ্র মাসের হিসাব অনুযায়ী সারা বছরের মধ্যে পূর্ণ রমদ্বান মাসের রোযা রাখা ফরজ এবং প্রতি রোযার নিয়্যত করাও ফরজ। নিয়্যত না করিলে রোযা শুদ্ধ হইবে না। রমদ্বানের রোযার নিয়্যত রাত্রে সেহরী খাওয়ার পরই করা উচিত। অন্যথায় পরের দিন বেলা ১২টার পূর্বে নিয়্যত করিতে হইবে।
রমদ্বানের রোযার নিয়্যত
نَوَيْتُ اَنْ اَصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمَضَانَ المُبَاَرَكِ فَرْضًا لَّكَ يَا اَللٰهُ فَتَقَبَّلْ مِنِّىْ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ العَلِيْمِ٠
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ আছুমা গাদাম মিন শাহরি রামাদ্বানাল মুবারাক ফারদ্বাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আন্তাছ-ছামীউল আলীম।
অর্থঃ আমি আগামীকল্য পবিত্র রমদ্বানের ফরজ রোযা রাখিবার জন্য নিয়্যত করিলাম। হে আল্লাহ! তুমি আমার রোযা কবুল কর। বাস্তবিক তুমি মহাশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।
রোযা খুলিবার নিয়্যত
اَللٰهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَتَكَّلْتُ عَلٰى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ اَلرَّحِمِيْنَ٠
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া তাওয়াক্কালতু আ‘লা রিজকিকা আফত্বারতু বি-রাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
অর্থঃ হে আল্লাহ্! তোমার জন্য রোযা রাখিয়াছিলাম, তোমার রহমতের উপর নির্ভর করিয়াছি, তোমার দেওয়া খাদ্য দ্বারা ইফতার করিলাম।
ইসলামের দৃষ্টিতে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় জানতে ভিজিট করুন
যে যে কার্যে রোযার কোন ক্ষতি হয় না।
১. অনিচ্ছাকৃভাবে গলার ভিতরে ধুলা-বালি, ধুঁয়া অথবা মশা-মাছি প্রবেশ করা।
২. অনিচ্ছাকৃতভাবে কানে পানি প্রবেশ করা।
৩. অনিচ্ছাকৃত বমি আসা অথবা অনিচ্ছাকৃত অল্প পরিমাণ বমি করা (মুখ ভরিয়া নয়)।
৪. বমি আসিয়া নিজে নিজেই ফিরিয়া যাওয়া।
৫. চোখে ঔষধ ও সুরমা ব্যবহার করা।
৬. ভুলক্রমে পানাহার করা।
৭. সুগন্ধ ব্যবহার করা বা অন্য কিছুর ঘ্রাণ লওয়া।
৮. নিজ মুখের থুথু কফ ইত্যাদি গলাধঃকরণ করা।
৯. শরীরে, মাথায় তৈল ব্যবহার কার।
১০. ঠান্ডার জন্য গোসল করা।
১১. দিনের বেলায় ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হওয়া।
১২. মেছওয়াক করা, মেছওয়াক করার দরুণ দাঁত হইতে রক্ত বাহির হওয়া, কিন্তু গলার ভিতরে পৌছে নাই।
রোযা ভঙ্গের কারণসমূহ
১. কানে নাকে তৈল অথবা ঔষধ প্রবেশ করান।
২. নস্য গ্রহণ করা।
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরিয়া বমি করা।
৪. মুখ ভরিয়া বমি আসার পরে পুনঃ উহা গিলিয়া ফেলা।
৫. কুলি করিবার সময় গলায় পানি ঢুকিয়া যাওয়া।
৬. দাঁতে আটকান খাদ্যকণা গিলিয়া ফেলা (যদি উহা ছোলার সমান বা তার চেয়ে বড় হয়।)
৭. মুখে পান রাখিয়া ঘুমাইয়া পড়িয়া সুবহে সাদেকের পর নিদ্রা হইতে জাগরিত হওয়া।
৮. ধূম-পান করা।
৯. ইচ্ছাকৃতভাবে লোবান বা অন্যান্য সুগন্ধ দ্রব্যের ধুঁয়া গলাধঃকরণ করা বা নাকের ভিতর টানিয়া লওয়া।
১০. রাত্রি মনে করিয়া সুবহে সাদেকের পরে সেহরী খাওয়া।
১১. সূর্য অস্তমিত হইয়াছে মনে করিয়া সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করা (এমতাবস্থায় শুধু ক্বাযা ওয়াজিব হইবে)।
১২. আর যদি দিবাভাগে রোযা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী স্ত্রী ব্যবহার অথবা পানাহার করে, তবে ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হইবে। কাফফারা সম্পর্কে অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের নিকট হইতে মাসআলা জানিয়া লইবেন।
রোযার মাকরূহসমূহ
১. অনাবশ্যক কোন জিনিস চিবান বা স্বাদ লওয়া।
২. কোন দ্রব্য মুখে দিয়া রাখা।
৩. অজু করাকালে গরগরা করা বা নাকের ভিতরে পানি টানিয়া লওয়া।
৪. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখে থুথু জমা করিয়া গলাধঃকরণ করা।
৫. গীবত-চোগলখোরী ও ঝগড়া-ফাসাদ করা। কেহ গায়ে পড়িয়া ঝগড়া-ফাসাদ করিতে চাহিলে বলিবে; আমি রোযাদার, তোমাকে প্রত্যুত্তর দিতে অক্ষম।
৬. সমস্ত দিন নাপাক অবস্থায় থাকা, ইহা অত্যন্ত গুনাহের কাজ।
৭. অস্থিরতা, কাতরতা প্রকাশ করা।
৮. দাঁত মাজনে কয়লা, টুথ-পাউডার, টুথ-পেষ্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা।
৯. দেরি করে ইফতার করা।
১০. গরমের কারণে ঠান্ডা পানি দ্বারা ভেজা কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখা
সেহরী খাওয়ার ফযীলত ও উহার নিয়ম
রোযার জন্য সেহরী খাওয়া সুন্নাত ও সওয়াবের কার্য। বিশ্বনবী (সা) এরশাদ করিয়াছেন, তোমরা সেহরী খাও, উহাতে অত্যন্ত বরকত হইবে। পেট ভরিয়া সেহরী খাওয়া জরুরী নহে, দুই-এক লোকমা বা খেজুরের টুকরা বা দুই এক দানা খাবার খাইলেও যথেষ্ট। সুবহে সাদেক্বের পূর্বে অর্থাৎ রাত্রের একেবারে শেষ ভাগে সেহরী খাওয়া মুস্তাহাব। সেহরী খাওয়াতে বিলম্ব হইয়া যাওয়ার কারণে যদি ধারণা হয় যে, ভোর হইয়া গিয়াছে (তদসত্ত্বেও কিছু খাইয়াছে), তবে এমতাবস্থায় সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ত্যাগ করা এবং পরে উক্ত রোযার ক্বাযা করা ওয়াজিব।
ইফতার করিবার মুস্তাহাব নিয়ম
১. সূর্য্যাস্তের পর ইফতার করিতে বিলম্ব করা অনুচিত। কিন্তু কেবলমাত্র আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকিলে সাবধানতার জন্য কিছু সময় বিলম্ব করা উত্তম।
২. খেজুর বা খোরমা দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত। তাহা না হইলে অন্য কোন মিষ্টদ্রব্য বা শুধু পানি দ্বারা ইফতার করিবে। আগুনে পাকান জিনিস যথা রুটি, ভাত ও শিরনী ইত্যাদি দ্বারা ইফতার করা কোন দূষণীয় নহে, কিন্তু ফল ইত্যাদি দ্বারা ইফতার করাই উত্তম।
শিফার আয়াতের আমল ও তদবির শিখতে ভিজিট করুন
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে যথাযথভাবে রোযা রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন!!!
মো: নজরুল ইসলাম, ০১৭১৬-৩৮৬৯৫৮