জান্নাতী নারীদের বৈশিষ্ট্য কি হতে পারে আজকের আলোচনায় তা তুলে ধরা হবে। তাই জান্নাতী নারীদের বৈশিষ্ট্য পড়ে নিন এক নজরে।
কিছু প্রয়োজনীয় আলোচনা
মহানবী (সা) জান্নাতী নারীদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন। ভাল ব্যবহারের এমন কিছু রমনী রয়েছেন যাদের ব্যাপারে জেনে রাখা আবশ্যক।
শরীয়তে এমন কিছু বিষয় শেখার আছে যা আলোচনা করতে, শুনতে বা কাউকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা লাগে। অথচ এই বিষয়গুলো জানা ফরজও হতে পারে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেবলমাত্র লজ্জাবোধের কারণে শেখা বা জানা হল না। ফলে আজীবন ভুলের মধ্যে থেকে গেলাম এবং বৈধ-অবৈধ সম্পর্কে বেগাফিল থেকে গোনাহের কাজ করে গেলাম নিজের অজান্তেই। এমনটা হতে দেয়া যায় না। জীবন পরিচালনার জন্য শরীয়তের গোপন মাসলা-মাসায়েল জানা ও শেখা আবশ্যক।
একটি কথা না বললেই নয় আর তা হল- জরুরি বা গোপনীয় যতসব মাসলা-মাসায়েল কোরআন-হাদিসে বা কিতাবাদিতে আছে এগুলো এমনি এমনি আসেনি। এই সব মাসলা-মাসায়েলের শিক্ষা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সা) নিজে। ক্রমান্বয়ে সাহাবীগণ, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীসহ আলেম-উলামাগণ এই সব বিষয়ের বিশদ আলোচনা করে গেছেন যাতে আমরা উপকৃত হই। তাহলে একজন আলেম যখন কোনো গোপনীয় মাসলা খোলা-মেলা আলোচনা করেন, কেন আমরা ইতস্ততা করতে শুরু করি। অনেক সময় ঐ আলেমকে বেশরম ব্যক্তি বলে মন্তব্য করি। কোনো আলেম যদি এই বিষয়ের খোলা-মেলা আলোচনা না করেন তাহলে আমরা জীবনেও এই শিক্ষা পাবো না।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ও বিভিন্ন ঔষধের নাম শিখতে ভিজিট করুন
হাদিস শরীফে এসেছে- প্রত্যেক মুসলমানের উপর (নর/নারী) বিদ্যা (শরীয়তে অবশ্যই পালনীয় এমন সব বিষয়) অর্জন করা ফরজ।
হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন- যে অন্যকে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করে তার জ্ঞান তুচ্ছ থেকে যায়।
কাজেই নিজের জন্য জানা ফরজ এমন সব বিষয়ের জ্ঞানার্জন করা দরকার। আমি এই সব বিষয় সম্পর্কে অনলাইনে লিখা প্রয়োজন মনে করছি দু’টি কারণে।
এক. অনলাইনে কোনো লেখা প্রকাশিত হলে যে কেউ এটা পড়তে পারে কাউকে জানতে না দিয়ে, কাউকে বুঝতে না দিয়ে। তাই অহেতুক যারা লজ্জাবোধ করে তারাও বিষয়গুলো গোপনীয়তা বজায় রেখে পড়তে পারবে, জানতে পারবে, শেখতে পারবে।
দুই. বাংলা ভাষায় এখনো ভাল মানের কোনো বই বা কিতাব রচিত হয়নি যা আমাদের কাছে সহজ ও সহজে বোধগম্য। আমি প্রতিটি মাসলা-মাসায়েলের উপস্থাপনা এতই সহজভাবে করতে চেষ্টা করব যাতে পাঠককুলের বুঝতে সহজ হয়।
জান্নাতী নারীদের বৈশিষ্ট্য কি রকম হতে পারে?
হাদিস শরীফে রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন- ‘যে নারী-
>> পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে;
>> রমজানের রোজা রাখবে;
>> স্বীয় গুপ্তস্থানের হেফাজত করবে (পর্দা রক্ষা করে এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থেকে);
>> স্বামীর আনুগত্য করবে।
এমন নারীদের জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিজি ও তাবরানি)
নারীদের দায়েমী ফরজ ৫টি
ক) ঈমানের সাথে থাকা
খ) পর্দায় থাকা
গ) সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা
ঘ) স্বামীর কথা মেনে চলা
ঙ) ছোট আওয়াজে কথা বলা।
নারীর দায়েমী সুন্নাত ৭টি
১) মাথার চুল লম্বা রাখা
২) চুল সুন্দর করে রাখা
৩) হাত পায়ের নখ কাটা
৪) নাভীর ও বোগলের নিচের লোম পরিষ্কার করা।
৫) ঢিলা ব্যবহার করা
৬) হায়েজ নেফাছে পট্টি ব্যবহার করা।
৭) মিসওয়াক করা।
ইসলামে নারীদের মর্যাদা কি পরিমাণ রয়েছে?
১. একজন নেককার নারী ৭০ জন ওলীর চেয়ে উত্তম।
২. একজন বদকার নারী এক হাজার বদকার পুরুষের চেয়ে নিকৃষ্ট।
৩. একজন গর্ভবতী মেয়েলোকের ২ রাকাত নামাজ একজন গর্ভহীন মেয়েলোকের ৮০ রাকাত নামাজের চেয়ে উত্তম।
৪. যে মেয়েলোক আল্লাহর ওয়াস্তে আপন সন্তানকে দুধ পান করান তাঁর প্রত্যেক ফোটা দুধের বিনিময়ে একটি নেকী তাঁর আমল নামায় লেখা হয়।
৫. যখন স্বামী পেরেশান হয়ে বাড়ী ফিরেন আর স্ত্রী স্বামীকে মারহাবা বলে সান্তনা দেন, আল্লাহপাকের পক্ষ হতে ঐ মেয়েলোককে জেহাদের অর্ধেক নেকী দান করা হয়।
৬. যে মেয়েলোক আপন সন্তানদের কারণে রাত্রে শুইতে পারে না, তাঁকে ২০টি গোলাম আজাদ করার নেকী দান করা হয়।
৭. যে ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে রহমতের নজরে দেখে, আল্লাহ তা’আলা ঐ দম্পতিকে রহমতের নজরে দেখেন।
৮. যে মেয়েলোক স্বামীকে আল্লাহর রাস্তায় পাঠিয়ে দেন এবং নিজেও স্বামীর অনুপস্থিতির কষ্ট সাদরে গ্রহণ করেন ঐ মেয়েলোক পুরুষ অপেক্ষা ৫০০ বৎসর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
৯. যে মেয়েলোক সন্তানের অসুখের কারণে ঘুমাতে পারেন না, সন্তানের সেবা করেন। আল্লাহ তা’আলা ঐ মেয়েলোকের পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।
১০. যে মেয়েলোক গরু-ছাগলের দুধ দোহন করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করেন, ঐ জানোয়ার তাঁর জন্য দো’আ করতে থাকে।
১১. যে মেয়েলোক বিসমিল্লাহ বলে খাবার প্রস্তুত করে আল্লাহ তা’আলা ঐ খাবারে বরকত দান করেন।
১২. যে মেয়েলোক বেগানা পুরুষকে উকি মেরে দেখে আল্লাহ্ তা’আলা ঐ মেয়েলোককে লানত করেন।
১৩. যে মেয়েলোক জিকিরের সাথে ঘর ঝাড় দেয় আল্লাহপাক তাঁর খানায়ে কাবা ঝাড় দেয়ার সওয়াব দান করেন।
১৪. যে মেয়েলোক নামাজ রোজার পাবন্দি করে পবিত্রতা রক্ষা করে চলে। তাঁকে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে।
১৫. দুই ব্যক্তির নামাজ মাথার উপর উঠে না, প্রথম যে গোলাম তাঁর মনিব থেকে পলায়ন করে। দ্বিতীয় ঐ নারী যে তাঁর স্বামীর সাথে নাফরমানী করে।
১৬. যে মেয়েলোক গর্ভবতী অবস্থায় থাকে, সন্তানাদি প্রসব না হওয়া পর্যন্ত ঐ মেয়েলোক দিনে রোজা এবং রাত্রে নামাযে রত থাকার নেকী পেতে থাকবে।
১৭. যে মেয়েলোকের সন্তান প্রসব হয় তাঁকে ৭০ বৎসর নফল নামাজ ও রোজার নেকী দেয়া হয়। প্রসবের সময় যে কষ্ট হয় প্রতিবারের ব্যথার কারণে আল্লাহপাক তাঁকে হজ্বের নেকী দান করে থাকেন।
১৮. সন্তান প্রসবের ৪০ দিনের মধ্যে প্রসবধারী মা মারা গেলে তাঁকে শাহাদাতের সওয়াব ও মর্তবা দান করা হয়।
১৯. যে মা সন্তানের কান্নাকাটির ফলে বদ দো’আ দেয় না বরং সবর করে ঐ মহিলা এক বছর নফল ইবাদতের সাওয়াব পাবে।
২০. যখন সন্তানের দুধ পান করানো শেষ হয়ে যায় তখন আসমান থেকে একজন ফেরেস্তা সুসংবাদ দেন যে তোমার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।
২১. যখন স্বামী বিদেশ হতে ফিরে আসে স্ত্রী খুশি হয়ে খানা খাওয়ায় এবং স্বামী সফরে থাকার সময় স্বামীর মালের কোন খেয়ানত না করে, তিনি ১২ বৎসর নফল নামাজের সওয়াব পাবেন।
২২. যে মেয়েলোক হুকুমের পূর্বে তাঁর স্বামীর খেদমত করে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ৭ তোলা স্বর্ণের সদকা করার সওয়াব দেন।
২৩. যে মহিলা তাঁর স্বামী সন্তুষ্ট অবস্থায় মারা যায় তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব।
২৪. যে স্বামী স্ত্রীকে ১টি মাসআলা শিক্ষা দিবেন তিনি ৭০ বৎসর নফল ইবাদতের সওয়াব পাবেন।
২৫. সকল জান্নাতীগণ আল্লাহপাকের সাক্ষাতের জন্য যাবে কিন্তু যে মহিলা তাঁদের হায়া ও পর্দা রক্ষা করে চলেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাঁদের সাক্ষাতে যাবেন।
২৬. যে সকল মেয়েলোক পর্দা রক্ষা করে না, লজ্জাহীন পাতলা কাপড় পরিধান করে এবং অন্যকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, ঐ সমস্ত মহিলা জান্নাতে যাইবে না।
২৭. যে নারী স্বামীকে দ্বীনের উপর চলার জন্য তাকিদ করেন। তিনি মা আছিয়ার সাথে জান্নাতে যাবেন।
ইসলামে নারীদের অবদান
১. সর্বপ্রথম ইসলাম কবুল করেছিলেন হযরত খাদিজা (রাঃ)।
২. সর্ব প্রথম ইসলামের জন্য শহীদ হন হযরত সোমাইয়া (রাঃ)।
৩. দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বপ্রথম বেশি ধন-সম্পদ ব্যয় করেছিলেন হযরত খাদিজা (রাঃ)।
৪. সবচেয়ে বড় মুহাদ্দিস ছিলেন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)।
৫. দ্বীনের জন্য বহু কষ্ট উপভোগ করে জীবন দান করেছিলেন হযরত আছিয়া (আ:) যিনি ছিলেন খোদায়ী দাবীকারী জালেম বাদশা ফেরাউনের স্ত্রী।
৩০টি আজব দ্রব্যগুণের টোটকা যাদু শিখতে ভিজিট করুন
আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে জান্নাতের পথে চলার তাওফিক দান করুন, আমীন!!!