সাহাবীদের চিনিবার উপায় নিয়ে বিভিন্ন কিতাবে আলোচনা করা হয়েছে। কোরআর হাদিসের ভিত্তিতে সাহাবীদের চিনিবার উপায় হচ্ছে আজকের মূল আলোচনা।
সাহাবীদের চিিনবার উপায়
প্রশ্ন হতে পারে, কে সাহাবী এবং কে সাহাবী নয়, তা কিভাবে নির্ণয় করতে হবে? ‘রিজাল’ ও হাদীস শাস্ত্র বিশারদগণ এ ব্যাপারে কতিপয় মূলনীতির অনুসরণ করেছেন।
প্রথমতঃ খবরে তাওয়াতুর’ অর্থাৎ একজন মানুষ সম্পর্কে যখন প্রতিটি যুগের অসংখ্য মানুষ বর্ণনা বা সাক্ষ্য দেবে যে তিনি সাহাবী ছিলেন,
দ্বিতীয়তঃ ‘খবরে মাশহুর’ অর্থাৎ প্রতিটি যুগের প্রচুর সংখ্যক মানুষ সাক্ষ্য দিবে যে, অমুক সাহাবী,
তৃতীয়তঃ কোন একজন সাহাবীর বর্ণনা বা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে,
চতুর্থতঃ কোন একজন প্রখ্যাত তাবেঈর বর্ণনা বা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে,
পঞ্চমতঃ কেউ নিজেই যদি দাবী করেন, আমি সাহাবী। সে ক্ষেত্রে দু’টি বৈশিষ্ট্য তাঁর মধ্যে আছে কিনা তা দেখতে হবে।
১. ‘আদালাত’ বা ন্যায় নিষ্ঠাতা। এটি সাহাবীদের বিশেষ গুণ। সাহাবিয়্যাতের দাবীদার ব্যক্তির মধ্যে এ গুণটি অবশ্যই থাকবে হবে।
২. ‘মুয়াসিরাত’ বা সমসাময়িকতা। সাহাবীদের যুগ শেষ হয়েছে হিজরী ১১০ সনে। কারণ, রাসূল (সাঃ) তাঁর ইন্তিকালের একমাস পূর্বে বলেছিলেন, আজ এ পৃথিবীতে যারা জীবিত আছে, আজ থেকে একশ’ বছর পর তারা কেউ জীবিত থাকবে না। সুতরাং হিজরী ১১০ সনের পর কেউ জীবিত থাকলে এবং সে সাহাবী বলে দাবী করলে, ‘রিজাল’ শাস্ত্র বিশারদরা তাকে সাহাবী বলে মেনে নেননি। অনেকে এমন দাবী করেছিলেন; কিন্তু সে দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে। তাদের জীবনীও ‘রিজাল’ শাস্ত্রে লিখিত আছে।
এ ছাড়াও সাহাবী নির্ধারণের আরো কিছু নিয়ম নীতি মুহাদ্দিসগণ অনুস্বরণ করেছেন। মনীষীদের জ্ঞানমূলক উক্তি পড়তে ভিজিট করুন
সাহাবীদের সমাজ ছিল একটি আদর্শ মানব সমাজ। তাঁদের কর্মকাণ্ড ছিল মানব জাতির জন্য একটি উৎকৃষ্টতম নমুনা স্বরূপ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের সততা, বিশ্বস্ততা, ভদ্রতা, আত্মত্যাগ ও সদাচরণ তুলনাবিহীন। তাঁরা ছিলেন একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতিশীল। গরীব ও মুহতাজ শ্রেণীর প্রয়োজন ও চাহিদাকে তাঁরা সব সময় অগ্রাধিকার দিতেন। বীরত্ব ও সাহসিকতায় তাঁরা ছিলেন নজীরবিহীন। রাসূলুল্লাহর (সা) ইত্তেবা বা অনুসরণ ছিল তাঁদের জীবনের মূল লক্ষ্য। তাঁদের জীবন-মরণ উভয়ই ছিল ইসলামের জন্য।
হযরত রাসূল করীম (সা) যে সর্বোত্তম সমাজের ভিত্তি রেখেছিলেন, সাহাবায়ে কিরাম হচ্ছেন সেই সমাজের প্রথম নমুনা। রাসূল পাকের (সা) সুহবতের বরকতে তাঁরা মহান মানবতার বাস্তব রূপ ধারণ করেছিলেন। ‘আদল, তাকওয়া, দিয়ানাত, ইহসান এবং খাওফে খোদায় তাঁরা ছিলেন সমুজ্জ্বল প্রতীক। তাঁদের মধ্যে এই অনুভূতি সদা জাগ্রত ছিল যে, এই পৃথিবীতে তাঁদের আগমণ ইসলামের ঝাণ্ডা সমুন্নত করা ও মানব জাতির মধ্যে সমতা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য হয়েছে। এখানে তাঁদেরকে খিলাফতে ইলাহিয়ার আমীন বা বিশ্বাসী রূপে আল্লাহর উদ্দেশ্য পূরণ করতে হবে বলে তাঁরা মনে করতেন। তেলেসমাতে হায়ওয়ানাত ১ম পর্ব পড়তে চাইলে ভিজিট করুন