স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য কোরআন ও হাদিসে খুবই সুন্দর আলোকপাত করা হয়েছে। স্বামীর খেদমত একজন স্ত্রীকে জান্নাতবাসী করতে সহায়তা করে। আজকের আলোচনায় স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য বিস্তারিত বর্ণনা করা হল।
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য
স্বামীর সাথে স্ত্রীর ও স্ত্রীর সাথে স্বামীর প্রথম সাক্ষাতেই উভয়ের প্রাণে বৈদ্যুতিক প্রবাহের মত এক প্রকার পুলক প্রবাহ ও আকর্ষণ তরঙ্গায়িত হয়। তখন হতেই উভয়ের অন্তঃকরণে পরস্পর মিলনের মধুর চিন্তার উদ্রেক হয়। ভবিষ্যতের সেই রঙ্গীন স্বপ্নই স্ত্রীকে তার পিতা-মাতা, ভাই বোন, আত্মীয়-স্বজন প্রভৃতির কথা ভুলিয়ে দেয় এবং পরস্পরকে নিবিড়ভাবে ভালবাসতে আরম্ভ করে। আর এটাই দাম্পত্য জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য এবং আল্লাহ্ তা’য়ালার ইচ্ছাও তাই। প্রত্যেক স্ত্রী তার স্বামীকে একান্ত কামনার বস্তু বলে মনে করে, এটাই স্বাভাবিক। সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে, স্বামী তার ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনের সাথী। কাজেই দুনিয়ার জীবনে সে তার স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে ও আনন্দ দান করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। প্রত্যেক পতিপ্রাণা সতী-সাধ্বী স্ত্রী স্বামীর খেদমত করাকে তার জীবনের প্রধান কর্তব্য বলে মনে করে এবং ইসলামী শরীয়তের বিধান ইহাই।
একদা জনৈকা স্ত্রীলোক হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)! আমার প্রতি আমার স্বামীর কি পরিমাণ হক বা দাবি আছে? তদুত্তরে তিনি বললেন-
১. স্বামীর বিনা অনুমতিতে কোন স্ত্রীলোক কোথাও গেলে সে ফিরে না আসা পর্যন্ত তার উপর ফেরেশতাগণ লানত বা অভিসম্পাত বর্ষণ করতে থাকেন।
২. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কোন স্ত্রীলোকের পক্ষে নফল রোযা রাখা নিষিদ্ধ।
৩. স্বামী যদি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে উটের পিঠে আরোহণ করে পথ চলতে থাকে, আর সেই অবস্থায় যদি স্বামী তার সাথে সঙ্গম করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তাতেও স্ত্রীর আপত্তি করা চলবে না।
৪. যদি কোন স্ত্রীলোক আসমান ও জমিনের সকল অধিবাসী সমতুল্য নেকী অর্জন করে থাকে, অথচ স্বামীকে কোন প্রকারে কষ্ট দেয়, তবে আল্লাহ্ তা’য়ালা তাকে হাত-পা বেঁধে ও চেহারা বিকৃত করে দোযখে নিক্ষেপ করতে আদেশ প্রদান করবেন।
৫. কোন স্ত্রীলোকের যদি হযরত সোলায়মান (আঃ) এর সমতুল্য সম্পদ থাকে এবং সে যদি সবই তার স্বামীর চরণে উৎসর্গ করে দেয়ার পরে কোন দিন খোঁটা দিয়ে বলে যে, আমার এত ধন-দৌলত ছিল তা সবই তুমি গ্রাস করেছ, তবে তার সেই দানের কোনই বিনিময় পাবে না।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ও বিভিন্ন ঔষধের নাম শিখতে ভিজিট করুন
৬. কোন স্ত্রীলোক যদি স্বামীর বিনা অনুমতিতে এক রাতের জন্য অন্যত্র বাস করে এবং এজন্য স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় ও ক্ষমা না করে, তবে যতই ইবাদত বন্দেগী করে থাকুক না কেন সে দোযখে যাবে।
৭. যে স্ত্রীলোক পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিত আদায় করে, রমজানের রোযা পালন করে ও স্বামীর খেদমত করে, সে বেহেস্তের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।
৮. কোন স্ত্রীলোকের স্বামী যদি তাকে সঙ্গমের জন্য শয্যায় আহবান করে আর স্ত্রী যদি স্বামীর আহ্বান অগ্রাহ্য করে পৃথক শয্যায় শয়ন করে রাত্রি যাপন করে, তবে যে পর্যন্ত তার স্বামী তাকে ক্ষমা না করবে সে পর্যন্ত তার কোন ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
৯. কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে এরূপ কথা বলে যাতে স্বামী অসন্তুষ্ট হয়, স্বামী যদি সেজন্য তাকে ক্ষমা না করে তবে মুনাফিক ও মুশরিকদের নামের তালিকায় সেই স্ত্রীলোকের নাম লিখিত হবে।
১০. যে স্ত্রীলোক তার স্বামীর আত্মীয়-স্বজন ও মেহমানদের সমাদর না করবে, আসমানের ফেরেশস্তামণ্ডলী তার প্রতি লানত বর্ষণ করেন।
১১. যে স্ত্রীলোকের প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তা’য়ালাও তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন। আর যার প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ্ তা’য়ালাও তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন।
১২. যে স্ত্রীলোক স্বামীর সংসারে কোন সম্পদ বিনষ্ট করে বা চুরি করে, তার প্রতি আসমানের সত্তর হাজার ফেরেশস্তা অভিসম্পাত বর্ষণ করেন।
১৩. আল্লাহ্ তা’য়ালা কিয়ামতের দিন স্ত্রীলোকদিগকে নামায সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করার পরেই স্বামীর প্রতি কর্তব্য পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করবেন। যদি কোন স্ত্রীলোক স্বামীর প্রতি তার কর্তব্য পালন না করে থাকে, তবে সে রীতিমত ইবাদত-বন্দেগী করা সত্ত্বেও দোজখবাসিনী হবে।
১৪. একদা হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, আমি বেশির ভাগ স্ত্রীলোককেই দোজখবাসিনী দেখেছি। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! এর কারণ কি? তিনি উত্তর করলেন, অধিকাংশ স্ত্রীই স্বামীর প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করে না এবং অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করে থাকে।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর কন্যা হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ) কে স্বামীগৃহে রওয়ানা দেয়ার কালে নিম্নলিখিত উপদেশগুলি প্রদান করেছিলেন। যথা-
১. “বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে প্রথমে স্বামীর গৃহে প্রবেশ করবে।
২. সর্বদা পাক পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে।
৩. প্রত্যহ মাথা ও শরীরে তেল মেখে গোসল করবে।
৪. প্রত্যহ নিয়মিতভাবে চোখে সুরমা ব্যবহার করবে।
৫. সর্বদা সুগন্ধি ব্যবহার করবে ও ঘরে লোবান জ্বালাবে।
৬. স্বামীর সঙ্গে সরল প্রাণে ও হাসি মুখে কথা বলবে। স্বামী যখন তোমাকে কোন কথা বলবে, তখন বিশেষ মনোযোগের সাথে তা শুনবে এবং তদনুযায়ী কাজ করবে।
৭. স্বামীকে প্রাণের চেয়ে ভালবাসবে ও দাসীর মত তার খেদমত করবে।
৮. তিক্ত ও অম্ল দ্রব্য বেশি খাবে না।
৯.শ্বশুরকে নিজের পিতার মত ও শাশুড়িকে নিজের মাতার মত ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সেবা-যত্ন করবে।
১০. আল্লাহ্ যখন যে অবস্থায় রাখেন, সেই অবস্থায়ই সন্তুষ্ট থাকবে ও আল্লাহর শোকর করবে।
৩০টি আজব দ্রব্যগুণের টোটকা যাদু শিখতে ভিজিট করুন