করোনা ভাইরাসের সঠিক তথ্য বা ভুল তথ্য ভালভাবে জেনে রাখা আবশ্যক। স্যোসাল মিডিয়ায় করোনা ভাইরাসের সঠিক তথ্য প্রচারের পাশাপাশি ভুল তথ্যও ছড়ানো হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে শতর্ক ও সাবধান থাকা জরুরি।
সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার জন্য করোনা ভাইরাসের সঠিক তথ্য জেনে নিন
ইউনিসেফ নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর করোনা ভাইরাস থেকে শর্তকতার কয়েকটি বিষয় তার ইউনিসেফ অনলাইন পত্রিকায় বলেন-
হাচির কাঁশির পর
টয়লেট ব্যবহারের পর
অসুস্থদের যত্ন নেয়ার পর
খাবার প্রস্তুত করার আগে ও পরে
খাওয়ার আগে
হাত ময়লা হলে
পশু-পাখির সংস্পর্শে আসার পর
ভালভাবে হাত ধূয়ে করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে এবং অন্যদের নিরাপদ রাখুন।
বিবিসি অনলাইন পত্রিকা করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার ৭টি উপায় জানিয়েছে। পাঠকদের উপকারে লাগতে পাবে ভেবে হুবহু নিচে দেয়া হল-
১. গণপরিবহন
গণপরিবহন এড়িয়ে চলা কিংবা সতর্কতার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাস, ট্রেন কিংবা অন্য যে কোন ধরণের পরিবহনের হাতল কিংবা আসনে করোনাভাইরাস থাকতে পারে।
সেজন্য যে কোন পরিবহনে চলাফেরার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা এবং সেখান থেকে নেমে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
২. কর্মক্ষেত্র
অফিসে একই ডেস্ক এবং কম্পিউটার ব্যবহার করলেও ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁচি-কাশি থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায়। যে কোন জায়গায় করোনাভাইরাস কয়েক ঘন্টা
এমনকি কয়েকদিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। অফিসের ডেস্কে বসার আগে কম্পিউটার, কিবোর্ড এবং মাউস পরিষ্কার করে নিন।
Neobux কোম্পানিতে ফ্রিতে কাজ করে দৈনিক ২ ডলার ইনকাম করার পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন
৩. জনসমাগমস্থল
যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় সেসব স্থান এড়িয়ে চলা কিংবা বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর মধ্যে খেলাধুলার স্থান, সিনেমা হল থেকে শুরু করে ধর্মীয় স্থানও রয়েছে।
বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে জুমার নামাজের সময় বাড়ি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সৌদি আরব ইতোমধ্যেই ওমরাহ বন্ধ করেছে।
৪. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যখন গ্রাহকরা যায় তখন অনেকেই একটি কলম ব্যবহার করেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি যদি সে কলম ব্যবহার করে তাহলে পরবর্তী ব্যবহারকারীদেরও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
সেজন্য নিজের কলম আলাদা করে রাখতে পারেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে।
এছাড়া টাকা উত্তোলনের জন্য যে এটিএম বুথ ব্যবহার করা হয়, সেখান থেকেও সংক্রমণ হতে পারে। কারণ এটিএম বুথের বাটন অনেকে ব্যবহার করে।
৫. লিফট
ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে আরেকটি জায়গা হতে পারে বাড়ি কিংবা অফিসের লিফট।
লিফট ব্যবহারের সময় নির্ধারিত ফ্লোরে যাবার জন্য লিফটের বাটন অনেকে ব্যবহার করছেন।
বিভিন্ন অফিস ভবনে প্রতিদিন শত-শত মানুষ লিফট ব্যবহার করছেন।
এদের মধ্যে কেউ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থাকেন এবং সে লিফটের বাটনে অন্যদের আঙ্গুল গেলেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
৬. টাকা-পয়সা
ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরণের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করার ঘটনা নতুন নয়।
এমনকি ব্যাংক নোটের মাধ্যমে সংক্রামক নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথাও বলেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের একদল গবেষক গত বছরের অগাস্ট মাসে বলেছিলেন, তারা বাংলাদেশি কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রায় এমন ধরণের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন, যা সাধারণত মল-মূত্রের মধ্যে থাকে।
গতমাসে ভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে টাকা বা ব্যাংক নোট জীবাণুমুক্ত করার একটি উদ্যোগ দেখা যায় চীনে।
দেশটিতে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সেখানে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে বাজার থেকে ব্যাংক নোট সরিয়ে নিয়ে তা আবার জীবাণুমুক্ত করে বাজারে ছাড়ে দেশটি।
৭. শুভেচ্ছা বিনিময়
করমর্দন এবং কোলাকুলির মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে।
আপনি যে ব্যক্তির সাথে কোলাকুলি এবং করমর্দন করছেন, তিনি যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তাহলে সেটি অন্যের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
এজন্য করমর্দন এবং কোলাকুলির না করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন সবকিছুর মূল কথা হচ্ছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা।
হাত না ধুয়ে নিজের মুখমণ্ডল স্পর্শ করবেন না। এটি হলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য নিয়মিত ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার ভুল কিছু তথ্য
ফেসবুকের মত সামাজিক গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই প্রতিদিন এমন হাজারো পরামর্শ তত্ত্ব চোখে পড়বে যেগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমন কিছু ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করেছে।
১. আইসক্রিম এবং অন্যান্য ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চললে তা এই রোগ ঠেকাতে সহায়ক হতে পারে। এটি পুরোপুরি অসত্য।
২. রসুন খেলে কি সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে?
সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে এই ভাইরাস ঠেকাতে রসুন খাওয়ার বহু পরামর্শ চোখে পড়েছে। কিন্তু ডব্লিউএইচও বলছে, এই ধারণা ঠিক নয়। রসুন স্বাস্থ্যকর একটি খাবার যার ভেতর জীবাণুনাশক কিছু উপাদান হয়তো রয়েছে। কিন্তু, নতুন এই করোনাভাইরাস ঠেকাতে রসুন কাজ করবে- এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আদৌ নেই।
৩. কেউ যদি দিনে ৩ কাপ রং চা (দুধ ছাড়া যে চা) পান করে, তার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই। অথবা আক্রান্ত হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তা সেরে যাবে। এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে রং চা খেলে স্বাস্থ্যের কিছুটা উপকার হয়ে থাকে বলে মনে করা হয়।
৪. থানকুনি পাতা খেলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই। এটি একেবারেই একটি ভুল তথ্য। তবে থানকুনি পাতা হল ঔষধি গুণ সম্বলিত এক ধরণের গাছের পাতা যা সেবন করলে শারীরিক ফায়দা হয়ে থাকে। এটার সাথে করোনা ভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই।
এই ধরনের মিথ্যাচার যারা সৃষ্টি করছেন তাদের প্রতি আমাদের সহজ একটি বার্তা হলো, দয়া করে থেমে যান। ভুল তথ্য শেয়ার করা এবং আস্থাভাজন অবস্থানে থাকা কারো নামের অপব্যবহার করে কর্তৃত্বের সঙ্গে এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা বিপজ্জনক ও অন্যায়। এই সব অনৈতিক প্রচারনা থেকে সেরে থাকা উচিত।
করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে দোয়া-কালাম জানতে বা শিখতে ভিজিট করুন