ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর মতে- নেসাব পরিমাণ মালের অধিকারী ব্যক্তির উপর কোরবানী করা ওয়াজিব। কারো কারো মতে সুন্নাতে মোয়াক্ক্বাদ্বা। আজকের লিখনীতে থাকছে কোরবানি করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা। ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান হল আল্লাহর নামে কোরবানী দেয়া। কিন্তু অনেক লোক আছেন যারা কোরবানি করার সঠিক নিয়ম না জানার কারণে এই মূল্যবান ইবাদাতে ভুল করে থাকেন।
কোরবানি করার সঠিক নিয়ম
কোরবানির পশু নিজ হাতে জবেহ করা মুস্তাহাব। যদি নিজে জবেহ করতে না পারেন তাহলে অন্যের দ্বারা তা সমাধা করানো যাবে। তবে জবেহ্’র সময় নিজে সামনে থাকা উত্তম। জবেহ্’র সময় নিম্ন লিখিত রগসমূহ কাটার ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে-
(ক) শ্বাসনালী (খ) খাদ্যনালী এবং (গ) রক্ত চলাচলের নালীদ্বয়।
বক্ষস্থল হতে গলদেশের মধ্যবর্তী কোন স্থানে জবেহ করা বাঞ্চনীয়। জবেহ’র পূর্বে ছুরি খুব ধারালো করে নিতে হবে। তারপর কোরবানির পশুর মাথা দক্ষিণ এবং পেছনের দিক উত্তর দিকে রেখে কেবলামুখী করে শায়িত করে দোয়া পড়বেন।
দোয়াঃ “ইন্নী ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতী, ওয়া নুসুকী, ওয়া মাহ্য়ায়া, ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা।
অত:পর “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর” বলে কোরবানির পশু জবেহ করবেন। জবেহ করার পর পাঠ করবেন- “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী (অংশীদার থাকলে- ‘ওয়া মিন’ বলার পর প্রত্যেকের নাম ও বাপের নাম বলবেন) কামা তাক্বাব্বালতা মিন খলীলিকা ইব্রাহীমা আলাইহিস্ সালাম ওয়া হাবীবিকা মুহাম্মাদিনিল্ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।”
নোট: এই দোয়ার মধ্যে শুধু ‘বিসমিল্লাহ্’ বলা ওয়াজিব। আর অতিরিক্ত যে কথাগুলো আছে সেগুলো বলা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়।
কোরবানী বিষয়ক ৪টি মাসআলা জানতে ভিজিট করুন
লক্ষ্যণীয় হলো- যদি কেউ একা কোরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে মিন্নি; আর অন্যের কোরবানির পশু জবাই করার সময় ‘মিন’ বলে যারা কোরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলতে হবে।
প্রশ্ন: নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কিন্তু ঋণগ্রস্ত। তাহলে ঋণের কারণে তার কোরবানির হুকুম কি? এ ব্যাপারে ইসলামের দিক-নির্দেশনাই বা কি?
উত্তর হলো-
> নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি ঋণগ্রস্ত হয় তবে দেখতে হবে, ঋণের পরিমাণ কত? কেননা ঋণ পরিশোধ করে দিলে যে সম্পদ থাকবে, তা কি নেসাব পরিমাণ হবে?
> যদি ঋণ পরিশোধ করে দিলে কোরবানির সময়ে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে তবে ওই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য কোরবানি আবশ্যক নয়।
> আর যদি ঋণ পরিশোধ করে দিলেও কোরবানির সময়ে সাময়িক ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে ওই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য কোরবানি আবশ্যক।
মালে নেসাব এর ব্যাখ্যা : মালে নেসাব বা নেসাব পরিমাণ মাল হল- যে ব্যক্তির কাছে ১ বছর যাবত সাড়ে ৭ তুলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তুলা রোপা বা সমপরিমাণ অর্থ থাকে (সকল প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার পর) তাঁর উপর কোরবানী করা ওয়াজিব হবে।
মালে নেসাব এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা: কোনো ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ মালের অধিকারী কি না তা মাপার মাপকাঠি তিনটি। যথা-
১. স্বর্ণের নেসার,
২. রৌপ্যের নেসাব ও
৩. নগদ অর্থের নেসাব।
যদি কারো কাছে ১ বছর যাবত কেবল সাড়ে ৫২ তুলা রোপা বা সমপরিমাণ অর্থ থাকে (সকল প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার পর) তবে তাঁর উপর কোরবানি/যাকাত ফরজ হবে। এক্ষেত্রে সাড়ে ৭ তুলা সোনা হিসেব করার প্রয়োজন নেই। আর যদি কারো কাছে কেবল সাড়ে ৭ তুলা সোনা থাকে তাহলে তাঁর উপরও কোরবানি/যাকাত ওয়াজিব হবে। আবার যদি কোনো ব্যক্তির কাছে সাড়ে ৭ তুলা সোনার চেয়ে সামান্য পরিমাণ কম থাকে আর তাঁর কাছে কোনো নগদ অর্থ বা কিছু পরিমাণও রোপা না থাকে তাহলে তাঁর উপর কোরবানি/যাকাত ওয়াজিব হবে না। কিন্তু যদি কারো কাছে সামান্য পরিমাণ স্বর্ণ, সামান্য পরিমাণ রোপ্য এবং কিছু অর্থ/টাকা থাকে আর এই সবকিছু একত্রে হিসেব করলে নেসার পরিমাণ টাকা হয়ে যায় তাহলে সেই ব্যক্তির উপর কোরবানি/যাকাত ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ সাড়ে ৫২ তুলার বর্তমান বাজার দর যত হবে নেসাব পরিমাণ অর্থ সেটাই হবে। (আল্লাহু আয়’লাম)
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহর সব নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদের যথাযথভাবে বিশুদ্ধ নিয়তে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
হযরত মূসা (আ) ও রুটি চোরের গল্প পড়তে ভিজিট করুন
মাওলানা মো: নজরুল ইসলাম, ভাদেশ্বরী।