শবে বরাতের ইবাদাত ও রোজার ফজিলত
এই আর্টিকেলে শবে বরাতের ইবাদাত সম্পর্কে লেখা হয়েছে। খুবই সহজ কিছু আমল আছে যেগুলোকে শবে বরাতের ইবাদাত বলে পালন করা হয়। এই রাতের ইবাদাত খুবই ফজিলতপূর্ণ।
আজ ৯ এপ্রিল ২০২০ সাল। আরবি সাবান মাসের ১৫তম রজনী অর্থাৎ হাদিসের ভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’। অথচ পৃথিবীতে মহামারি ভাইরাস করোনার আক্রমন রোধে সামাজিক দুরত্ব রজায় রাখতে মসজিদে দলবদ্ধ হয়ে বড় জামাতে নামাজের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর রাতের ইবাদাত-বন্দেগী ঘরে বসে করার জন্য সরকারীভাবে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। নফল ইবাদাত মূলত গোপনভাবে আদায় করা উত্তম। কাজেই শবে বরাতের রাতের ইবাদাত ঘরে বসে পালন করাই ভাল। এই রাতের ইবাদাত আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়।
ইসলিমক ভাল ভাল পোষ্ট পড়তে ভিজিট করুন
শবে বরাতের ইবাদত সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনা
আরবি বছরের অষ্টম মাস শাবান। এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত হলো লাইলাতুম মিন নিসফি শাবান। এটি লাইলাতুল বরাত নামে ব্যাপক পরিচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ রাতের ইবাদত-সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। এ রাত সম্পর্কে হাদিসের যেসব বর্ণনা পাওয়া তা হলো-
>> হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান)
>> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘জিবরিল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসেছিলেন এবং বললেন, আপনার প্রভু আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন (জান্নাতুল) বাকিতে যাওয়ার জন্য এবং তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য।’ (মুসলিম)
>> হজরত আলি ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড় এবং এর দিনে রোজা রাখ। কেননা এ দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিজিকপ্রার্থী আমি তাকে রিজিক দেব। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছ এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত (তিনি এভাবে আহবান করেন)।’ (ইবনে মাজাহ) শায়খ আলবানি এ হাদিসকে জইফ জিদ্দান তথা মওজু বলেছেন।
>> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হারিয়ে ফেললাম (বিছানায় পেলাম না)। আমি (তাঁর সন্ধানে) বের হলাম। এসে দেখলাম তিনি (জান্নাতুল) বাকি কবরস্তানে আছেন। তিনি বলেন, তুমি কি ভয় করছ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি কোনো অবিচার করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি অনুমান করলাম আপনি আপনার অন্য কোনো বিবির কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানে (১৫ তারিখের রাতে) দুনিয়ার কাছের আকাশে অবতীর্ণ হন। তারপর কালব গোত্রের বকরির পালের লোমের চেয়েও বেশী সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ) হাদিসটিকেও জঈফ বলা হয়েছে।
শবে বরাতে ইবাদাত করার নিয়ম
শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ এ রজনীতে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী যে সকল আমল করা যায়, তা তুলে ধরা হলো-
১. দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া, যাতে সিজদাও দীর্ঘ হবে।
২. কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা।
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরূদ পাঠ করা।
৪. গোনাহের কথা স্মরণ করে ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৫. কবিরা গোনাহ হতে তাওবা করে ফিরে আসা
৬. রহমত ও কল্যাণ কামনায় দোয়া করা।
৭. রাত জেগে ইবাদাত করার ফলে যেন ফজরের নামাজ তরক না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা।
৮. শেষ রাতে সেহরি খাওয়া।
৯. পর দিন রোজা রাখা।
কতিপয় ভাল অজিফা
১. এক হাজার বার দূরূদ শরীফ
২. এক হাজার বার ইস্তেগফার (আসতাফিরুল্লাহ, ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহীম)
৩. ৭ বার সূরা দুখান তিলাওয়াত
৪. ৭ বার সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত
৫. ইসমে জাতের জিকির ( আল্লাহ শব্দের জিকির)
শবে বরাতের নেক আমলসমূহ
শবে বরাতে আমরা বিভিন্ন নেক আমল করতে পারি। যেমন-
জিকির-আজকার করা,
কোরআন তিলাওয়াত করা,
নফল নামাজ পড়া,
আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করা,
দান-খয়রাত করা,
সম্ভব হলে সালাতুত তাসবিহ পড়া,
আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া, ইত্যাদি।
কাদের গোনাহ মাফ করা হয় না
পুণ্যময় শবে বরাতে সবার গুনাহ মাফ হলেও দুই ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় না।
এক. হিংসুক।
দুই. আল্লাহর সঙ্গে শরিককারী।
অর্থাৎ এ দুই ব্যক্তির অপরাধ এতটাই জঘন্য যে, শবে বরাতের মতো পবিত্র রাতেও তাদেরকে মাফ করা হয় না। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু মুসা আশয়ারি (রা) বলেন, রাসুল (সা) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ ১৫ শাবানের রজনীতে সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রতি মনোযোগ দেন। অতঃপর সবাইকে ক্ষমা করে দেন দুই ব্যক্তি ছাড়া। তারা হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিককারী ও হিংসুক।’ (ইবনে মাজাহ)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রজব ও শাবানে তিনি রমজানের অধীর অপেক্ষায় থাকতেন। রমজানের আগমনের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রসুল (সা.) শাবান মাসের (দিন তারিখের হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ্য রাখতেন যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (আবু দাউদ ১/২১৮)। উম্মতকেও তিনি শাবান মাসের দিন তারিখের হিসাব রাখার গুরুত্বারোপ করেছেন। এ মাসে অধিক হারে নফল রোজা রাখা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। শাবান মাসের অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত হচ্ছে শবে বরাত। হাদিসে এ রাতের ফজিলতের বিস্তারিত আলোচনা এসেছে। হাদিসে আছে হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতি (আরবি) মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ এই তিন দিন রোজা রাখতেন। সে হিসাবে শবে বরাতের আগের দিন পরের দিন এবং এর পরের দিন মোট তিন দিন নফল রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
হাদিস শরীফে আছে, এ রাতে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরই আল্লাহ তা’য়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। মাগরিব থেকেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রহমত নিয়ে বান্দাদের রহমত দান করার জন্য প্রথম আসমানে আসেন এবং প্রচুর সংখ্যক মানুষের গোনাহকে ক্ষমা করেন। হাদিসের ভাষ্যমতে, এই রাত হচ্ছে আল্লাহর কাছে পাওয়ার রাত, চাওয়ার রাত। এই রাত হচ্ছে আল্লাহর দরবারে কাঁদার রাত। এ রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজ বান্দাদের গোনাহ মাফ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ। আর নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতেরজন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব।
রাতের নফল ইবাদত
রাতের নফল ইবাদাতের মধ্যে রয়েছে; বাদ মাগরিব ছয় থেকে বিশ রাকাত আউওয়াবিন নামাজ। হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে; এসবের মাঝে কোনো মন্দ কথা না বলে, তার এই নামাজ ১২ বছরের ইবাদতের সমতুল্য গণ্য হবে। হজরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। (তিরমিজি, মিশকাত, ফয়জুল কালাম, হাদিস: ৪৪৯-৪৫০)।
অসুস্থদের জন্য করণীয়
যারা খুবই অসুস্থ কিংবা দুর্বল, পুরো রাত ইবাদত করার শক্তি রাখেন না। তারা শবে বরাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বেন এবং ভোর রাতে উঠে যাবেন যাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়। কারণ তাহাজ্জুদের সময় দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়। হাদিস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি এশার নামাজ এবং ফজরের নামাজ মসজিদে এসে জামাতের সঙ্গে আদায় করবে, আল্লাহ তা’য়ালা পুরো রাত ইবাদত করার সওয়াব তাকে দান করবেন। কাজেই এশা এবং ফজরের নামাজকে প্রথম তাকবিরের সঙ্গে আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।
অনলাইনে ফ্রি ইনকামের পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন