সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে এই আর্টিকেলে। মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম জানেন না। তাই আমরা বিভিন্ন কিতাব থেকে উক্ত নামাজের বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করব ইনশাহ আল্লাহ।
সালাতুত তাসবিহ এর পরিচয়
সালাত শব্দের অর্থ নামাজ। আর তাসবিহ বলতে ‘সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার’ এই শব্দগুলোকে বোঝানো হয়েছে। যে নামাজে এসব তাসবীহ পড়া ইসলামে সেই নামাজ সালাতুত তাসবীহ (صلاة تسبيح) বা তাসবীহের নামাজ হিসেবে পরিচিত। ইসলাম অনুসারীদের জন্যে এটি একটি ঐচ্ছিক ইবাদত। এটা বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মতো নয়।
সালাতুত তাসবিহ এর ফজিলত
আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ তাঁদের বিপদ-আপদ দূর করতে এবং মনের খারাপ চিন্তা থেকে মুক্ত হতে হাতিয়ার হিসেবে সালাতুত তাছবিহ পড়তেন। সালাতুত তাছবীহ অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ নামাজ। হাদীস শরীফে আছে- এই নামাজ পড়লে আল্লাহপাক নামাজ আদায়কারীর আগের-পিছনের, পুরাতন এবং নতুন, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত, ছোট-বড়, গোপনে করা, প্রকাশ্যে করা যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেন। এই নামাজ সম্ভব হলে দৈনিক একবার, তা না হলে সপ্তাহে একবার, তা না হলে মাসে একবার, যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে বছরে একবার পড়া উচিত। যদি এটাও সম্ভব না হয় তাহলে জীবনে একবার হলেও নামাজটা পড়ে নিবেন। বিখ্যাত ওলামায়ে কেরামদের মতে, বিপদ-আপদ এবং চিন্তার অবসানের জন্য সালাতুত তাছবীহের চেয়ে কার্যকরী জিনিস আর নেই।
থানকুনি পাতার ভেষজ গুনাবলি সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিজিট করুন
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) প্রতি শুক্রবার সালাতুস তাসবিহ নামাজ আদায় করতেন। হজরত আবু জাওযা (রহ) অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রতিদিন জোহরের আজানের পর জামাত শুরু হওয়ার আগে সালাতুত তাসবিহ পড়তেন।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম
সালাতুত তাসবিহ চার রাকায়াত বিশিষ্ট নামাজ। প্রত্যেক রাকায়াতে ৭৫ বার করে মোট চার রাকায়াতে ৩০০ বার নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে হয়।
দোয়াটি হল- (سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ)
উচ্চারণ: ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’
অর্থঃ ‘আমি আল্লাহ তা’আলার গুণগান কীর্তন করছি এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার নিমিত্ত আর আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোনো মাবুদ নাই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।’
নামাজের নিয়ত
“নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া’লা আরবায়া রাকাআতি সালাতিত তাসবিহি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়া’লা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
ছালাতুত তাসবিহতে উপরোক্ত দোয়া পাঠ করার ব্যাপারে হাদিস ও ফিকাহের কিতাবগুলোর মধ্যে কিছু নিয়ম বর্ণিত আছে। যেমন-
১. ১ম রাকাতে সানা পড়ার পরে উক্ত তাসবীহ ১৫ বার পড়তে হবে
২. তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে কোরআন থেকে ক্বিরাত পাঠ (সুরা মিলানো) সম্পন্ন হবার পর দাঁড়ানো অবস্থায় রুকুতে যাওয়ার পুর্বে ১০ বার পড়তে হবে।
৩. রুকু করবে এবং রুকু অবস্থায় দোয়ার পর (এ তাসবিহ) ১০ বার পাঠ করতে হবে।
৪. রুকু থেকে মাথা ওঠানোর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় (রাব্বানা লাকাল হামদ পড়ার পর) এ তাসবিহ ১০ বার পাঠ করতে হবে।
৫. তারপর সিজদায় যাবে এবং সিজদা অবস্থায় এ তাসবীহ ১০ বার পাঠ করবে।
৬. সিজদা থেকে মাথা ওঠানোর পর ১০ বার।
৭. পুনরায় সিজদা গিয়ে ১০ বার।
৮. সিজদা থেকে মাথা ওঠিয়ে আবার দ্বিতীয় রাকাতে একইভাবে তাসবিহ পাঠ করতে হবে।
ভুল হলে করণীয়
‘সালাতুত তাসবীহ’ নামায পড়াবস্থায় দানাদার তসবিহ হাতে গণনা করা মাকরূহ বা অনুচিত। আঙ্গুলের করগুলোতে তাসবীহ গণনা করতে হবে। কোনো স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে ক্বওমা তথা রুকু থেকে দাঁড়ানোকালে ও দুই সিজদার মাঝখানে তাসবীহ ভুলে যাওয়া তাসবীহগুলো আদায় করা যাবে না। সূরা-ক্বিরাত পড়ার পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরাত পাঠে সেটি আদায় করতে হবে। একইভাবে ক্বিরায়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকুতে গিয়ে আদায় করতে হবে। রুকুতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ প্রথম সিজদায় আদায় করতে হবে। সিজদায় যাওয়ার পূর্বে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে তা প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা দুই সিজদার মাঝখানে আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। ঠিক দুই সিজদার মাঝখানের তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে পড়তে হবে। একইভাবে আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে পরের রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে পড়ে নিতে হবে। শেষ সিজদার তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে সালাম ফিরানোর পূর্বে তাসবীহ পড়ে নিতে হবে।
পেট থেকে গ্যাস বের করার সহজ কৌশল শিখতে চাইলে ভিজিট করুন