আজ কোরআনের মোজেজা নিয়ে লিখব। কোরআন আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থ। ভালভাবে এটা অধ্যায়ন করলে কোরআনের মোজেজা সহজেই বুঝা সম্ভব। কোরআন জানলে ঈমান আরো মজবুত হবে।
মহানবী (সা) এর শ্রেষ্ট মোজেজা হল কোরআনুল কারীম। এই পবিত্র কোরআনের কতিপয় বিষ্ময়কর তথ্য নিয়ে আজকের আলোচনা। মহান আল্লাহ তা’য়ালার অসীম ক্ষমতার একটি ছোট্ট নমুনা হল পবিত্র কোরআন।
একজন মুসলমানের জন্য পবিত্র কোরআনের বিষ্ময়কর তথ্য সম্পর্কে জানা আর বুঝা অতিব জরুরি। কোরআন ভালভাবে বুঝতে পারলে মহান আল্লাহ তা’য়ালার অসীম ক্ষমতার ব্যাপারে অবগত হওয়া সহজ। আসুন আমরা কোরআনকে জানি ও কোরআনের নির্দেশিত পথে চলি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সুযোগ যেন দান করেন আমীন!!!
পবিত্র কোরআন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুবই মঙ্গলময়। অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর যাতে তোমরা আল্লাহর করুণা বা রহমতপ্রাপ্ত হও।”
মোজেজা বা অলৌকিকতা হল সাধারণ ঘটনা বা প্রচলিত নিয়মের বহির্ভূত কিছু ঘটনা। মহান আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ মোজেজা দেখাতে পারে না। নবী-রাসূলদের দেখানো যেসব মোজেজার সত্যতার প্রতি জ্ঞানী ব্যক্তিদের কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, তারা বুঝতেন যে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া এ ধরনের অতি-প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটানো কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার বহু মানুষ নবী-রাসূলদের মোজেজাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেনি।
কোমর ব্যথার কারণ ও তার প্রতিকার জানতে এখনই ভিজিট করুন
ইবনে হিশাম এক ঐতিহাসিক ঘটনায় লিখেছেন,
“এক রাতে আবু সুফিয়ান, আবু জেহেল ও আখনাস পরস্পরকে না জানিয়ে রাসূল (সাঃ)’র ঘরের কাছে এসে কোরআনের মধুর তেলাওয়াত শুনছিল। ফেরার পথে তারা একে অপরকে দেখে ফেলে এবং কোরআন তেলাওয়াত শোনার জন্য সবাই নিজেকে তিরস্কার করে। তারা আর রাসূল (সাঃ)’র ঘরের কাছে আসবে না বলেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। কিন্তু কোরআনের বিস্ময়কর আয়াত ও অলৌকিক আকর্ষণে পরের রাতে তারা আবারও পৃথকভাবে রাসূল (সাঃ)’র ঘরের কাছে এসে গোপনে কোরআনের আয়াতের মধুর আবৃত্তি শোনে। ফেরার পথে আবারও পরস্পরের সাথে সাক্ষাত ও লজ্জিত হওয়ার পালা। তৃতীয় রাতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ওই তিন কাফের নেতা আবারও পরস্পর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে, কোরআনের আয়াতের আবৃত্তি শোনার জন্য তারা নবী(সাঃ)’র ঘরের পাশে জড় হবে না।”
পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার মাধ্যমে অনেক নতুন তথ্য বা জ্ঞান অর্জন সম্ভব। যেমন, পবিত্র কোরআনের সংখ্যাগত মোজেজা বা অলৌকিকতার নানা দিক গত এক শতকে গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ মহাগ্রন্থের সব বাক্য ও শব্দ বিশেষ গাণিতিক বা সংখ্যাগত নিয়মে বিন্যস্ত হয়েছে। এ বিষয়টি ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মত তুলে ধরেন মিশরের একজন চিন্তাবিদ। গবেষকরা তার এই আবিস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন। ওই মিশরিয় গবেষক এ নিয়ে তিন বছর গবেষণা করেন এবং কোরআনের সংখ্যাগত বিস্ময় তুলে ধরার মাধ্যমে এটা প্রমাণ করেছেন যে, এ মহাগ্রন্থ কোনো মানুষের রচনা নয়।
পবিত্র কোরআনের সংখ্যা বিষয়ক মোজেজা বা অলৌকিকতার প্রধান সংখ্যাটি উনিশ। “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বা “পরম করুণাময় ও অনন্ত দাতা আল্লাহর নামে” বাক্যটিতে রয়েছে ১৯ টি অক্ষর। কোরআনের প্রতিটি সূরার শুরুতে রয়েছে এই মহান আয়াত। এ আয়াতটি কোরআনে ১১৪ বার এসেছে, যা উনিশের ছয় গুণ। কোরআনের সূরার সংখ্যাও ১১৪টি। অবশ্য সূরা তওবার শুরুতে এ মহান বাক্যটি নেই। অন্যদিকে সূরা নামলে এ বাক্য দু’বার রয়েছে।
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”-এর গভীর অর্থ ও গুরুত্বের কথা মুসলিম আলেম সমাজ যুগ যুগ ধরে উল্লেখ করে আসছেন। বিশ্বনবী (সাঃ)’র উপদেশ বা দিক নির্দেশনাতেও এ বাক্য তেলাওয়াতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের আগে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলা না হলে বা এ বাক্যটি স্মরণ করা না হলে সে কাজটি বিফল হয়।
উল্লেখ্য, কোরআনের সর্বশেষ সূরা “সূরা আন নাস”-এর শব্দ সংখ্যা ১৯। এই সূরার প্রথম আয়াতের বর্ণ সংখ্যাও ১৯। কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ সূরা আল আলাকের প্রথম আয়াতের শব্দ সংখ্যাও ১৯। এ সূরা কোরআনের ৯৬ নম্বর সূরা। অন্য কথায় শেষের দিক থেকে এ সূরার অবস্থান ১৯ নম্বরে। এই সূরার মোট আয়াতের সংখ্যা ১৯। সূরা আত তওবা থেকে সূরা নামল পর্যন্ত সূরার মোট সংখ্যা ১৯। সূরা তওবায় ” বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” শীর্ষক সূচনা-বাক্য দিয়ে শুরু হয়নি। অন্যদিকে সূরা নামলে এ বাক্য দু’বার রয়েছে। কোরআনে ওয়াহেদ শব্দটি ১৯ বার এসেছে। রহমান শব্দটি কোরআনে ৫৭ বার এসেছে যা ১৯ এর তিন গুণ। রহিম শব্দটি এসেছে ১১৪ বার যা ১৯ এর ৬ গুণ। ১৯ দিয়ে মেলানো যায় এমন আরো অনেক বিষয় রয়েছে এ মহাগ্রন্থের।* কোরআনের বিভিন্ন অংশের এসব সংখ্যাগত মিল সত্যিই অলৌকিক।
অনেক গবেষক বিচ্ছিন্ন কিছু বর্ণ বা হরফ দিয়ে শুরু হওয়া সূরাগুলো নিয়ে গণনাগত গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, এসব বর্ণের সাথে সংশ্লিষ্ট বা মূল সূরাটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, আলিফ লাম মীম দিয়ে শুরু হয়েছে সূরা বাকারা। এই সূরার সাথে আলিফ, লাম ও মীম বর্ণগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা তাবাতাবায়ি তাফসির আল মিযানের ১৮ তম খণ্ডে লিখেছেন, বিচ্ছিন্ন অক্ষর দিয়ে শুরু হওয়া যে সূরাগুলোর প্রথম অক্ষরটি অভিন্ন সেসব সূরার বিষয়বস্তুর মধ্যে মিল দেখা যায়। যেমন, সূরা আরাফের সাথে সূরা সোয়াদ এবং আলিফ লাম মীম দিয়ে শুরু হওয়া সূরাগুলোর বিষয়বস্তুর মধ্যে মিল লক্ষনীয়। “আলিফ লাম রা” দিয়ে শুরু হওয়া সূরা রাদের বিষয়বস্তুর সাথে আলিফ লাম মীম ও আলিফ লাম রা দিয়ে শুরু হওয়া সূরাগুলোর বিষয়বস্তুর মিলের কথাও এ প্রসঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক।
গবেষকরা আরো দেখেছেন যে, অশেষ রহস্যে ভরা মহাগ্রন্থ কোরআনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু শব্দ ও বিষয়ের মধ্যেও সংখ্যাগত সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, কোরআনে মাস অর্থে ব্যবহৃত “শাহর” শব্দটি এসেছে ১২ বার। দিন অর্থে “ইয়াওম” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে ৩৬৫ বার। ঘন্টা অর্থে “সয়াত” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২৪ বার।
আল কোরআনে ঈমান বা এর সমার্ধক শব্দ এসেছে ৮১১ বার এবং জ্ঞান বা এর সমার্থক শব্দ এসেছে ৮১১ বার। আর এ থেকে মানুষের সৌভাগ্যের দুই প্রধান চাবিকাঠি হিসেবে ঈমান ও জ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও গুরুত্ব ফুটে উঠে। মানবীয় মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য ঈমান যতটা জরুরি, মানুষের পূর্ণতার জন্য জ্ঞানও ততটা জরুরি।
কোরআনে আকল বা এর সমার্থক শব্দ এবং নূর বা আলো শব্দটি এসেছে ৪৯ বার। কোরআনে ইবলিস শব্দ এসেছে ১১ বার এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশও এসেছে ১১ বার। কোরআনের সংখ্যাগত বা গাণিতিক বিষয় সংক্রান্ত নবীন গবেষকদের সব দাবিই গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। প্রখ্যাত মুফাসসির ও ফকিহ আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজির মনে করেন, কোরআনের সূরার সাথে সূরার অক্ষরের সংখ্যাগত সম্পর্ক নির্নয়ে কম্পিউটারের ব্যবহার জরুরি; কিন্তু এ সংক্রান্ত গবেষণা এখনও খুব বিকশিত না হওয়ায় তাতে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। তার মতে এ ধরনের গবেষণা কোরআন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।
কোরআনের মোজেজা বুঝতে নিচের পরিসংখ্যানটি পড়ে ফেলুন এখনই
পুরুষ শব্দটা এসেছে ২৩ বার
নারী শব্দটা এসেছে ২৩ বার
আদেশ শব্দটা এসেছে ১০০০ বার
নিষেধ শব্দটা এসেছে ১০০০ বার
হালাল শব্দটা এসেছে ২৫০ বার
হারাম শব্দটা এসেছে ২৫০ বার
জান্নাত শব্দটা এসেছে ১০০০ বার
জাহান্নাম শব্দটা এসেছে ১০০০ বার
দুনিয়া শব্দটা এসেছে ১১৫ বার
আখিরাত শব্দটা এসেছে ১১৫ বার
ফেরেশতা শব্দটা এসেছে ৮৮ বার
শয়তান শব্দটা এসেছে ৮৮ বার
জীবন শব্দটা এসেছে ১৪৫ বার
মৃত্যু শব্দটা এসেছে ১৪৫ বার
উপকার শব্দটা এসেছে ৫০ বার
ক্ষতিকর শব্দটা এসেছে ৫০ বার
মানুষ শব্দটা এসেছে ৩৬৮ বার
রাসুল শব্দটা এসেছে ৩৬৮ বার
জিহ্বা শব্দটা এসেছে ২৫ বার
উত্তম বাক্য শব্দটা এসেছে ২৫ বার
মাস শব্দটা এসেছে ১২ বার আর
দিন শব্দটা এসেছে ৩৬৫ বার
সালাত শব্দটা এসেছে ৮২ বার
শেয়ার করে এই বিষ্ময়কর মুজিযা সবাইকে জানিয়ে দিন
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ও বিভিন্ন ঔষধের নাম শিখতে ভিজিট করুন