ফাজায়েলে আমল বা আমলের ফজিলতসমূহ শেখা ও আমল করা প্রয়োজন। ফাজায়েলে আমল মুসলিম উম্মাহার জীবনের হাতিয়ার বলা চলে। উদ্দেশ্য হাসিলের বহুরকম আমল থাকছে এই আর্টিকেলে।
লেখক: হযরত মাওলানা ক্বারী মো: নজরুল ইসলাম সাহেব, ভাদেশ্বরী, (এমএম, এমএ)
ভূমিকা: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি অতিশয় দয়ালু ও পরম করুণাময় এবং যিনি আমাদেরকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা) এর উম্মত বানিয়েছেন। এরই সাথে লক্ষ কোটি দুরূদ ও সালাম পেশ করছি দয়াল নবী কারীম (সা) এর উপর যার উছিলায় সৃষ্টি হয়েছে এই পৃথিবীর সব কিছুই। আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবাণীতে আমি এই কিতাবে কতিপয় বিশেষ বিশেষ আমলের নিয়ম উল্লেখ করেছি যেগুলো বিভিন্ন ভাষার অত্যন্ত নির্ভরশীল ও গ্রহণযোগ্য কিতাব থেকে অতি সচেতনভাবে অনুবাদ করে পাঠকদের কাছে পেশ করেছি যাতে তারা উপকৃত হন।ফাজায়েলে আমল বা আমলের ফজিলতসমূহ
দ্রব্যগুণেন টোটকা যাদু বিদ্যা শিখতে ভিজিট করুন
আশা করি এ সমস্ত আমল থেকে কোন একটি আমলই যদি কেউ করেন, তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না। কোরআনুল কারীমের কোনো একটি সূরা বা আয়াত কিংবা ইসিমের আমল করলে নি:সন্দেহে অপরিসীম সওয়াব রয়েছে। অপরদিকে আমলের বদৌলতে মনের জায়েজ উদ্দেশ্যও পূর্ণ হবে। এ বিষয়ে সন্দেহ করার অবকাশ নেই। কেননা, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআন মজিদ তিলাওয়াতকারীকে দুনিয়া ও আখেরাতে দান করেন অফুরন্ত নিয়ামত ও উচ্চ মর্যাদা। আল্লাহ তা’য়ালা মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আরাবী জান্নাতী ভাষার ইরশাদ করেন-
اِنِّى ڶاَ اُضِعَ عَمَڶَ عَامِڶِ مِّنكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اَنْثٰى٠
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি কোনো আমলকারীর আমলকে বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক।
(আলে ইমরান: আয়াত-১৯৫)
দোয়া ও আমল সম্পর্কে জরুরি কিছু কথা
আল্লাহপাক প্রত্যেক আমলের সওযাব বা প্রতিদান দিয়ে থাকেন। কেউ যদি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে বিশেষ কোনো আমল করেন এবং আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে দোয়া করেন তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তাঁর পরিশ্রমকে ব্যর্থ হতে দেন না। কোরআন মজিদ হলো বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়াত ও রোগের প্রতিকার। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন-
قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ اٰمَنُوا هُدًى وَ شِفَاء٠
(সূরা- হা-মিম সিজদা, আয়াত- ৪৪)
অর্থ: হে রাসূল (সা)! আপনি বলে দিন, ইহা (কোরআন) বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়াত এবং রোগের প্রতিকার ।
আল্লাহ তা’য়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন-
وَ نُنَزِّلُ مِنَ اَلقُرانِ ماَ هُوﹶ شِفاَء وَ رَحمَةَ لِلِّمُؤمِنِينَ٠
(সূরা: বানী ইসরাইল, আয়াত-৮২)
অর্থ: এবং আমি কোরআনে এমন বিষয় অবতীর্ণ করি যা রোগের চিকিৎসা এবং মু‘মিনদের জন্য রহমত।
আল্লামা ইবনে কাইয়ুম তাঁর লিখিত গ্রন্থ ‘যাদুল মা‘আদ’ এর মধ্যে বলেছেন, কোরআন যাকে রোগমুক্ত করতে পারে না, তাকে আল্লাহপাকও শিফা দেন না। আর যার জন্য কোরআন যথেষ্ট হয় না, তার জন্য আল্লাহও যথেষ্ট হন না। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻗَﺪْ ﺟَﺎﺀﺗْﻜُﻢ ﻣَّﻮْﻋِﻈَﺔٌ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢْ ﻭَﺷِﻔَﺎﺀ ﻟِّﻤَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﺪُﻭﺭِ ﻭَﻫُﺪًﻯ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔٌ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ
(সূরা: উইনুস, আয়াত-৫৭)
অর্থ: হে মানবকুল! তোমাদের কাছে উপদেশবাণী পৌছেছে তোমাদের রবের পক্ষ হতে এবং (এতে আছে) অন্তরে লুকায়িত রোগের নিরাময়। আর মু‘মিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (র) বলেন, কোরআন শরীফের আয়াতসমুহ এবং আল্লাহ তা’য়ালার নামসমূহ দ্বারা নেককার লোকের মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করানো আধ্যাত্মিক চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর হুকুমে এগুলোর দ্বারা আরোগ্য লাভ করা যায়। ওলামায়ে কিরাম এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে, ৩টি শর্তের ভিত্তিতে ঝাড়-ফুঁক করা জায়েজ। যথা:
১. ঝাড়-ফুঁকের দোয়া আল্লাহপাকের কালাম বা আল্লাহর জাতিবাচক অথবা গুণবাচক নাম বা রাসুল (সা) এর বাণী তথা হাদিস থেকে হতে হবে।
২. দোয়া আরবী অথবা এমন কোনো ভাষায় হতে হবে যার অর্থ বুঝা যায়।
৩. সাথে সাথে এই বিশ্বাস থাকতে হবে যে, শুধুমাত্র ঝাড়-ফুঁক করার কারণেই রোগের শিফা হয়নি; বরং আল্লাহপাকের হুকুমেই রোগ আরোগ্য হয়েছে। ঝাড়-ফুঁক একটি উপকরণ বা উছিলা মাত্র। (اﹶعلم اﹶلّلٰهُ) ফাজায়েলে আমল বা আমলের ফজিলতসমূহ
কোন লোকের দোয়া কবুল হয়ে থাকে?
কিংকর্তব্যবিমুঢ় এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া কোনো বাধা ছাড়াই কবুল হয়ে থাকে। এতে কোনো কাফের অথবা পাপীকে নির্দিষ্ট করা হয় নাই। পিতার দোয়া ছেলের জন্য, অনুগত ছেলের দোয়া পিতার জন্য কবুল হয়ে থাকে। ন্যায়পরায়ন বাদশাহ এবং পূণ্যবান লোকের দোয়াও ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ছফরের সময় মুসাফিরের দোয়া, ইফতারের পূর্বে রোজাদারের দোয়াও কবুল হয়ে থাকে। এমনিভাবে সেই মুসলমানের দোয়াও কবুল হয়ে থাকে, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে না। অথবা যে কারো উপর কোন অত্যাচার করে না। অথবা দোয়া করার পর নৈরাশ্যজনক কোন শব্দ মুখে দিয়ে উচ্চারণ করে না।ফাজায়েলে আমল বা আমলের ফজিলতসমূহ
কিংকর্তব্যবিমুঢ় ব্যক্তি অর্থাৎ খুবই অসহায় ব্যক্তির দোয়া অতি তাড়াতাড়ি কবুল করা হয়। যার একটি উদাহরণ হলো-
মৃত ছেলে পুনরায় জীবিত হলো
হাফেজ ইবনে নজর সালামী বলেন যে, আমি রবী ইবনে কুলসুমের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। তিনি আমাকে একটি ঘটনা শুনিয়েছেন। ঘটনাটি হলো-
একজন বৃদ্ধা নারী ছিলেন যিনি অন্ধ, বধির এবং প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত। তাঁকে দেখাশুনা করার মত তাঁর একটি ছেলে ছাড়া আর কেউ ছিল না। সে ছেলেটিই কামাই-রোজগার করে তাঁর খোর-পোষ ও খানা-পিনার ব্যবস্থা করত। একদিন ছেলেটি মারা গেল। আমরা ঐ ছেলেটির মায়ের নিকটবর্তী গিয়ে মৃতের শোক প্রকাশান্তে বললাম ‘হে আল্লাহর বান্দি! আপনি ধৈর্য্য হারা হবেন না। আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখুন এবং বিপদে আল্লাহকে স্বরণ করুন।’ বৃদ্ধা বললেন কি হয়েছে, আমার ছেলে মারা গেল নাকি? আমরা বললাম, হ্যাঁ। সাথে সাথে মহিলাটি এভাবে দোয়া করতে লাগলেন- ‘হে আল্লাহ! আমার প্রতি রহম কর। আমার থেকে আমার ছেলেকে উঠিয়ে নিও না। আমি বধির, অন্ধ এবং প্যারালাইসিস রোগী। আমাকে দেখার মত সে ছাড়া আর কেউ নেই। হে আমার মওলা! এ ব্যাপারে আমার প্রতি অনুগ্রহশীল হও। বর্ণনাকারী বলেন যে, আমরা ধারণা করলাম বৃদ্ধা মহিলাটি হয়ত পাগল হয়ে গিয়েছেন। তিনি এভাবে দোয়া করতে ছিলেন। অত:পর আমরা কাফন ক্রয়ের জন্য বাজারে গেলাম এবং ফিরে এসে দেখি যে, মহিলার ছেলে সুস্থ অবস্থায় সহীহ সালামতে মায়ের কাছেই বসে আছে। সুবহানাল্লাহ! ফাজায়েলে আমল বা আমলের ফজিলতসমূহ
দোয়া থেকে নিরাশ হওয়া নিষেধ
হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত আছে যে, নি:সন্দেহে নবী করিম (সা) ইরশাদ ফরমান- ‘বান্দার দোয়া কবুল করা হয়ে থাকে যতক্ষণ সে কোন পাপ না করে অথবা তাড়াহুড়া না করে। আরজ করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল (সা)! তাড়াহুড়ার অর্থ কি? হুজুর (সা) ইরশাদ করলেন, দোয়াকারী বার বার বলতে থাকে যে, আমি দোয়া করছি অর্থাৎ আমি অধিক পরিমানে দোয়া করছি কিন্তু তা আমি কবুল হতে দেখি নাই। অত:পর সে ক্লান্ত হয়ে বসে যায় এবং দোয়া করা ছেড়ে দেয়। ফাজায়েলে আমল বা আমলের ফজিলতসমূহ
তাকওয়া বা পরহেজগারী কি?
হযরত উমর (রা) প্রশ্ন করেছিলেন, তাকওয়া কি? হযরত উবাই ইবনে কা‘আব (রা) বললেন, হে আমিরুল মু‘মিনীন! আপনি কি কখনো এমন পথ অতিক্রম করেছেন, যা পরিপূর্ণভাবে কণ্টকাকীর্ণ? হযরত উমর (রা) বললেন, কয়েকবারই এমন হয়েছে। হযরত উবাই ইবনে কা‘আব (রা) বললেন, এমন ক্ষেত্রে আপনি কি করেছেন? হযরত উমর (রা) বললেন, আঁচল গুটিয়ে একান্ত সাবধানতার সাথে চলেছি। হযরত উবাই উবনে কা’আব (রা) বললেন, ব্যস, ‘তাকওয়া’ এরই নাম। এ দুনিয়া হল একটি কাঁটাবন; পাপের কাঁটায় পরিপূর্ণ। কাজেই দুনিয়াতে এমনভাবে জীবন-যাপন করা ও চলাফেরা করা উচিৎ যাতে পাপের কাঁটায় আঁচল ফেসে না যায়। আর এরই নাম ‘তাকওয়া’ যা দুনিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
তাওয়াককুল সম্পর্কে কিছু কথা
তাওয়াককুল শব্দের অর্থ আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা। আল্লাহর রাসূল (সা) এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের চেয়ে অধিক তাওয়াককুল তো গোটা দুনিয়ার আর কারো মধ্যে পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাঁদের তাওয়াককুল বা নির্ভরশীলতা এ রকম ছিল যে, তাঁরা কখনো বাহ্যিক কাজকর্ম ফেলে রেখে বসে থাকতেন না। বরং যখন যে কাজের প্রয়োজন পড়তো তা আদায় করতেন। এবং বলতেন ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’। আর এটাই হলো প্রকৃত তাওয়াককুল। কাজকর্ম না করে ঘরে বসে থেকে কেউ একজন বলল ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’ এটাকে প্রকৃত তাওয়াককুল বলা যাবে কি?
একটি শিক্ষণীয় ঘটনা
ইয়ারমুখের যুদ্ধের সময় রণাঙ্গন থেকে এ মর্মে একটি চিটি আসলো, যেন আরো অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানো হয়। পত্রটি খলিফা হযরত ওমর (রা) এর হাতে আসলে তিনি উত্তরে লিখেছিলেন- ‘‘তোমাদের পত্র হস্তগত হয়েছে। তোমরা অতিরিক্ত সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেছ। কিন্তু আমি তোমাদের এমন এক সত্তার ঠিকানা দিচ্ছি, যাঁর সাহায্য অধিকতর কার্যকারী এবং যাঁর সৈন্যদল অজেয়। আর তিনি হচ্ছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তোমরা তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। আর জেনে রেখো, মুহাম্মদ (সা) বদর যুদ্ধে তোমাদের থেকে আরো কম সংখ্যক সৈন্য নিয়ে আল্লাহপাকের সাহায্য লাভ করেছিলেন এবং বিজয় অর্জন করেছিলেন। আমার এই পত্র পৌছা মাত্রই তোমরা শক্রদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়। আর আমার কাছে এ ব্যাপারে অধিক কিছু লিখার প্রয়োজন নেই” এ ঘটনার বর্ণকারী বলেন- আমরা এ পত্র পেয়ে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে কাফির সৈন্যদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম এবং আমরা সহজেই জয় লাভ করলাম। (তাফসীরে মা‘রেফুল কোরআন) ফাজায়েলে আমল বা আমলের ফজিলতসমূহ
আমলের ফলাফল
আমল শব্দের অর্থ হলো অনুশীলন। তাই আমল বা অনুশীলনের দ্বারা ‘মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহর গায়েবী সাহায্য’ পাওয়া কিংবা ‘কোনো কিছুর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য’ পাওয়া যাবেই কিন্তু এটা আল্লাহ তা’য়ালার অশেষ করুণার উপর নির্ভরশীল। কোরআন ও হাদিসে এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ আমল করার পর বান্দা যখন কায়মনে আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া করে আল্লাহ তা’য়ালা তা ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। কেননা, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হলেন পরম করুণাময় ও অধিক দয়ালু। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে কোন আমল করেন আর যথাযথ নিয়মে বিরামহীন সাধনা চালিয়ে যান। এভাবে আমল সমাপ্ত করার পর প্রার্থনা করেন তাহলে অবশ্যই আল্লাহপাক তাঁর প্রার্থনা ফিরিয়ে দিবেন না। কবুল করবেন। এমনকি দোয়ার মাধ্যমে মনের বড় বড় আশা-আকাংখাও পূর্ণ হয়। দোয়ার মত দোয়া করতে পারলে মৃত লোকও জীবিত হয়ে কথা বলবে। যেমন-
মায়ের দোয়ায় মৃত সন্তান খানা খেলেন
হযরত ছাবেত বুনানী (র) বলেন, হযরত আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একজন আনছারী সাহাবীর সেবা-শুশ্রূষার জন্য গেলাম। যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেল। আমরা তাঁর চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে দিলাম এবং তাঁকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলাম। এক সাহাবী মৃতের মাকে বললেন ধৈর্য্য হারা হবেন না; সওয়াবের আশা রাখুন। মহিলা জিজ্ঞেস করলেন তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেল না কি? আমরা বললাম জি-হ্যাঁ। মহিলা বললেন, তোমরা কি সত্যিই বলছ যে, তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেছে? আমরা বললাম সত্যিই বলছি। ইহা শুনে মহিলা আকাশের দিকে দু‘হাত তুলে আল্লাহর দরবারে এই বলে দোয়া আরম্ভ করে দিলেন যে, “হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার রাসূল (সা) এর মিত্র হয়েছি। আর যখনই তুমি আমার উপর কোন বড় ধরনের মুসিবত পতিত করেছ আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করেছি। অত:পর তুমি আমার মুসিবত দূর করে দিয়েছ। এবারও আমি তোমারই কাছে দোয়ার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। হে আমার মা‘বুদ! তুমি আমার উপর এ মুসিবতের বোঝা চাপিয়ে দিওনা। মহিলার এ দোয়ার পর মৃত আনসারী সাহাবী নিজের উপর থেকে নিজ হাতে কাপড় হটিয়ে দিলেন এবং উঠে বসলেন। অত:পর আমরা খাওয়া-দাওয়া করলাম। তিনিও আমাদের সাথে খানা খেলেন। সুবহানাল্লাহ!
আলোচনার উপান্তে এসে একথাই বলা যায় যে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্য ছাড়া কোনো ব্যক্তিই সফলকাম হতে পারেন না। তাই হাত তুলে প্রাণ খুঁলে মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছি, যেন আল্লাহপাক আমাদেরকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। আমিন!
জ্ঞানী মনীষীদের উক্তিসমূহ পাঠ করতে ভিজিট করুন
যোগাযোগ: মো: নজরুল ইসলাম, ০১৭১৬-৩৮৬৯৫৮, nazruld@yahoo.com