হাই ব্লাড প্রেশার এর কারণ ও তার চিকিৎসা

হাই ব্লাড প্রেশার এর কারণ ও তার চিকিৎসা

বর্তমান সময়ের একটি কমন সমস্যা হচ্ছে হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ। আমরা আজকের এই আর্টিকেলে হাই ব্লাড প্রেশার এর কারণ ও তার সঠিক প্রতিকার সম্পর্কে আলোকপাত করব। এতে থাকবে এর প্রাথমিক চিকিৎসার সঠিক ও সহজ বর্ণনা।

হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। সঠিক খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে হাই ব্লাড প্রেশার থেকে দূরে থাকা সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য এমন সব খাবারের পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে থাকবে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। কারণ খাদ্যের এসব উপাদান উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। কম চর্বিযুক্ত দুধ বা চর্বিবিহীন দুধ বা দুধজাত খাদ্য যেমন দই ইত্যাদিতে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম।

তাজা ফল যেমন আপেল, কলা আর শাকসবজি হচ্ছে পটাশিয়ামের ভালো উৎস। টমেটোতেও আছে বেশ পটাশিয়াম। দানা শস্য বা গোটা শস্য, বিচি জাতীয় খাবার, বাদাম, শিমের বিচি, ডাল, ছোলা, লাল চালের ভাত, লাল আটা, আলু, সবুজ শাকসবজি, টমেটো, তরমুজ, দুধ ও দই ইত্যাদিতে বেশি ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়।

অনলাইনে ইনকাম করার সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন

হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রনে আনতে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন।

১. কম চর্বিযুক্ত দুধ বা চর্বিবিহীন দুধ বা দুধজাত খাবার প্রতিদিন খেতে হবে ২ থেকে ৩ সার্ভিং। এক সার্ভিং দুধ বা দুধজাত খাবার মানে আধা পাউন্ড বা এক গ্লাস দুধ অথবা এক কাপ দই।

৩. ফল ৪ থেকে ৫ সার্ভিং প্রতিদিন। টুকরো টুকরো করে কাটা আধা কাপ ফল কিংবা মাঝারি সাইজের একটা আপেল বা অর্ধেকটা কলা অথবা আধা কাপ ফলের রস এতে হবে ফলের এক সার্ভিং। ফলের রসের চেয়ে আস্ত ফলই ভালো।

৪. শাকসবজি প্রতিদিন প্রয়োজন ৪ থেকে ৫ সার্ভিং। শাকসবজির এক সার্ভিং মানে এক কাপ কাঁচা শাক বা আধা কাপ রান্না করা শাক।

৫. দানা শস্য প্রতিদিন দরকার ৭ থেকে ৮ সার্ভিং। দানা শস্যের এক সার্ভিংয়ের উদাহরণ হলো এক স্লাইস রুটি অথবা আধাকাপ ভাত বা এক কাপ পরিমাণ গোটা দানা শস্য।

৬. বিচি জাতীয় খাবার প্রতি সপ্তাহে প্রয়োজন ৪ থেকে ৫ সার্ভিং। বিচি জাতীয় খাবারের এক সার্ভিংয়ের উদাহরণ হলো এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ বাদাম বা আধাকাপ রান্না করা শিম বা মটরশুঁটি।

শতর্কতা

যেসব ওষুধে রক্তচাপ কমে বা লো প্রেসার হতে পারে, সেসব ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন।

উচ্চ রক্তচাপ কি?

চিকিৎসকদের মতে, সিস্টোলিক (ওপরেরটা) রক্তচাপ ১৪০ মিলিমিটার মার্কারি বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক (নিচেরটা) রক্তচাপ ৯০ মিলিমিটার মার্কারি বা তার বেশি পাওয়া যায়, তাহলে সেই ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে ধরা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। যদি উচ্চ রক্তচাপের কারণে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয়, যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি বৈকল্য; তাহলে এসবের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা বা বমি বমি ভাব হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

৯৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না। বাকি পাঁচ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে কিডনির অসুখ, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অসুখ, যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ৷ কিছু জন্মগত রোগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে এবং কখনো কখনো গর্ভকালীন অবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

কারা আছেন ঝুঁকিতে

স্থূলকায় ব্যক্তি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি, ধূমপায়ী এবং যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি।

প্রতিকার ও প্রতিরোধ

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাপনের ধরণে আনতে হবে কিছু পরিবর্তন। ওজন বেশি থাকলে তা কমাতে হবে, খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ অর্থাৎ পাতে লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিতে হবে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে, দিনে অন্তত ৩০ মিনিট জোরে হাঁটা উচিত এবং এভাবে হাঁটা উচিত সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন। ধূমপান করা যাবে না। মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থাকলে তা কমাতে হবে। এ অভ্যাসগুলো যাঁরা এখনো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হননি, তাঁদেরও থাকা উচিত। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি  জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা সত্ত্বেও তাঁর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না এলে তাঁকে ঔষুধ সেবন করতে হবে এবং তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো।

ঔষুধগুলো প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেবন করতে হবে। ঔষুধ সেবন করতে যেন ভুলে না যান, সে জন্য এমন জায়গায় রাখতে পারেন, যেন তা সহজেই চোখে পড়ে; যেমন খাবারের টেবিলের একদিকে রাখতে পারেন। হঠাৎ কোনো দিন যদি ভুলেই যান, তাহলে যখনই সেটির কথা মনে পড়বে; তখনই খেয়ে ফেলুন।

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে তিনি প্রতি ছয় মাস অন্তর রক্তচাপ পরিমাপ করাবেন। আর যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে এক থেকে দেড় মাস অন্তর বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তচাপ পরিমাপ করাতে হবে।

আর যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত নন, তাঁদেরও রক্তচাপ পরিমাপ করাতে হবে নিয়মিত। ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সী প্রত্যেকেরই উচিত প্রতি এক থেকে দুই বছর পর পর রক্তচাপ পরিমাপ করা৷ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও কাছে রক্তচাপ পরিমাপ না করানোই ভালো।

হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে

সুস্থ ব্যক্তির হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে তাঁকে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কেউ কেউ মাথায় পানি দিয়ে বা বরফ দিয়ে আরাম পেতে পারেন। অনেকে তেঁতুলের শরবত খেয়ে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর মাধ্যমে রক্তচাপ কমে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অবশ্যই। প্রয়োজনে তিনিই দেবেন ঔষুধ। আর যাঁদের আগে থেকেই রক্তচাপ বেশি, তাঁদের হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলেও অস্থির না হয়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। মাথায় পানি বা বরফ দিয়ে সাময়িক উপশম হলেও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে নিজে থেকে রক্তচাপ কমানোর জন্য কোনো ঔষুধ গ্রহণ করবেন না।

উৎস: বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত ও পরিমার্জিত

ইউনানী চিকিৎসার সঠিক ব্যবহার শিখতে ভিজিট করুন

What do you think?

-1 points
Upvote Downvote

Leave a Reply

Loading…

0

Comments

0 comments

লো ব্লাড প্রেশারের লক্ষণ, চিকিৎসা ও সতর্কতা

লো ব্লাড প্রেশারের লক্ষণ ও চিকিৎসা

পেট থেকে গ্যাস দূর করার ঘরোয়া টোটকা

পেট থেকে গ্যাস দূর করার ঘরোয়া টোটকা