প্রথম অধ্যায় ১ম পর্ব শুরু
আমালিয়াত প্রথম অধ্যায় ১ম পর্ব অংশে বিসমিল্লাহ এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। পাঠকদের জন্য প্রথম অধ্যায় ১ম পর্ব অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم এর ফজিলত ও আমল
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” কোরআন শরীফের সূরা নামলের একটি আয়াত বা অংশ। সূরা তাওবা ব্যতীত প্রত্যেক সূরার প্রথমে এই আয়াত লেখা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (র) বলেন- ‘এটা এমন একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আয়াত যা প্রত্যেক সূরার প্রথমে লেখা এবং দু’টি সূরার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে।’ কোরআন শরীফের স্থানে স্থানে উপদেশ রয়েছে যে, প্রত্যেক কাজ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে আরম্ভ কর। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘যে কাজ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” ব্যতীত আরম্ভ করা হয়, তাতে কোন বরকত থাকে না।’ এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ঘরের দরজা বন্ধ করতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলবে, বাতি নেভাতেও “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলবে, পাত্র আবৃত করতেও “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলবে। কোনো কিছু খেতে, পানি পান করতে, ওযু করতে, সওয়ারীতে আরোহণ করতে এবং তা থেকে অবতরণকালেও “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলার নির্দেশ কোরআন-হাদিসে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী) প্রথম অধ্যায় ১ম পর্ব চলছে
রাসুল (সা) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম তিলাওয়াত করে, আল্লাহপাক তাঁর জন্য দশ হাজার নেকি প্রদান করেন এবং দশ হাজার বদী মার্জনা করেন এবং দশ হাজার উচ্চ মর্যাদা দান করেন।” অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি একবার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে, তাঁর সমস্ত গোনাহের মধ্যে এক বিন্দু গোনাহও বাকি থাকে না। মোহাদ্দিগণ উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- এই হাদিসে যে গোনাহের কথা উল্লেখিত হয়েছে তা হল ছগিরা গোনাহ।
একটি ঘটনা
রূহুল বয়ানের তাফসীরকারক স্বীয় তাফসীরে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আলোচনায় একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন- যখন হুযুর আলাইহিস সালাম মি‘রাজে তাশরীফ নিলেন এবং জান্নাতসমূহে ভ্রমণ করলেন তখন চারটি নহর (প্রস্রবন) বা প্রবাহমান নদী পরিদর্শন করেন । এগুলো হলো-
১. পানির প্রস্রবণ।
২. দুধের প্রস্রবণ
৩. শরাব বা পানীয় এর প্রস্রবণ
৪. মধুর প্রস্রবণ
হুযুর আলাইহিস সালাম জিব্রাঈল আমীনকে জিজ্ঞেস করলেন, এ নদীগুলো বা প্রস্রবণগুলো কোথা থেকে এসেছে? হযরত জিব্রাঈল (আ) আরয করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! আমি এ সম্পর্কে অবহিত নই। অন্য আরেকজন ফেরেস্তা এসে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! এ চারটি প্রস্রবণ আমি দেখাচ্ছি। তিনি হুযুর আলাইহিস সালামকে একটি স্থানে নিয়ে গেলেন। সেখানে একটি বৃক্ষ ছিল যার নিচে একটি দালান তৈরি হয়েছিল। এবং দরজার ওপর তালা ঝুলছিল এবং এই দালানের নিচ থেকে এ চারটি নহর প্রবাহিত হচ্ছিল। হুযূর আলাইহিস সালাম এরশাদ করলেন- দরজা খুলো। ফেরেস্তা আরয করলেন, এর চাবি আমার কাছে নেই; বরং আপনারই কাছে রয়েছে। এই দালান খোঁলার চাবি হল “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। হুযূর আলাইহিস সালাম “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে তালায় হাত স্পর্শ করলেন, দরজা খুঁলে গেল। তিনি ভেতরে গিয়ে পরিদর্শন করে দেখলেন যে, সেই দালানে চারটি খুঁটি রয়েছে। আর প্রতিটি খুঁটিতে লেখা রয়েছে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। بِسْمِ اللَّه এর م থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং اللَّه ইসিমের ه থেকে দুধ বের হচ্ছে। الرَّحْمَن এর م থেকে শরাব এবং الرَّحِيم শব্দের م থেকে মধু রেব হচ্ছে। ভেতর থেকে শব্দ আসছে- হে আমার মাহবুব! আপনার উম্মতের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়বে, সে এই চারটি নি‘য়ামতের হকদার হবে। প্রথম অধ্যায় ১ম পর্ব চলছে
হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত আছে, যে সময় কোনো ব্যক্তি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে তখন শয়তান এমনভাবে গলে যায় যেভাবে সীসা গলে যায়।
শায়েখ আবুল আব্বাস আহমদ বিন আলী বুনি (র) তাঁর লিখিত বিখ্যাত কিতাব “শামছুল মোয়ারিফুল কোবরা” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, আল্লাহ তা’য়ালা কোরআন, তাওরাত, যবুর ও ইঞ্জিলসহ মোট ১০৪ খানা আসমানি গ্রন্থ নাজিল করেন। এই সকল আসমানি গ্রন্থের সমষ্টি হল কোরআনুল কারিম। আর কোরআনুল কারিমের সমষ্টি অর্থাৎ সমুদয় নিয়ামত ও বরকত জমা রয়েছে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এর মধ্যে। আর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এর সম্পূর্ণ নিয়ামত ও বরকত লুকিয়ে রাখা হয়েছে ب হরফের মধ্যে। যার অর্থ এই যে, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
بى ماﹶ كان و بى ما يكوُن
এ জন্যই হাদিস শরীফে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াতকে কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত বলা হয়েছে।
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর মধ্যে মোট ১৯টি হরফ। আর দোজখ রক্ষাকারী সরদার ফেরেস্তাও ১৯ জন। যে ব্যক্তি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে, সে উক্ত সরদার ফেরেস্তাদের সব রকম আজাব হতে মুক্তি লাভ করবে।
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, দোজখের দারোগা ফেরেস্তার নাম মালেক। তিনি যখন কোনো ফেরেস্তাকে দোজখের বিভিন্ন প্রকোষ্টের মধ্যে কোনো ব্যক্তির নতুন কোনো আজাবের ব্যবস্থা করার জন্য পাঠাবেন, তখন মালেক ফেরেস্তা উক্ত ফেরেস্তার কপালে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখে দিবেন। তখন দোজখের আগুন ঐ ফেরেস্তার দেহে কোনো ক্রিয়া বা ক্ষতি করবে না। অর্থাৎ দোজখের আগুন ঐ ফেরেস্তার গায়ে লাগবে না ।
হযরত সুলাইমান (আ) যখন বিলকিছকে প্রথম চিটি লিখেছিলেন, সেখানে তিনি লিখেছিলেন-
اِنّهُ مِن سُليمان و اِنّهُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم ٠
(সূরা নমল:আয়াত-৩০)
কাজেই এই বিসমিল্লাহর বরকতে বিলকিছ সুলাইমান (আ) এর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন এবং বিলকিছের পুরা ইয়ামান রাজ্য হযরত সুলাইমান (আ) এর আয়ত্বে এসেছিল।
তাফসীরে কবীরে উল্লেখ আছে, আল্লাহ তা’য়ালা কোনো এক নবীকে জানান যে, কোনো ব্যক্তি জীবনে ৪ হাজার বার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করেছে বলে তাঁর আমলনামা সাক্ষ্য দিলে শেষ বিচারের দিন আরশের নিকট তাঁর পতাকা স্থাপন করা হবে।
দুররুল মুখতার এ বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তির মৃত্যূর পর তাঁর কপালে ও বুকে (আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিতে) “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখে দেয়া হলে এর বরকতে তিনি কবরের আযাব হতে রেহাই পেয়েছিলেন।
তাফসীরে আযীযীর মধ্যে বর্ণিত আছে, এক ওলী আল্লাহ তাঁর কাফনে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখে দেয়ার ওসিয়ত করলে তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হয়। উত্তরে তিনি বলেন যে, শেষ বিচারের দিন তিনি করুনাময় আল্লাহর দরবারে তাঁর রাহমান ও রাহিম নামের যথার্থ মূল্য দাবি করতে পারবেন।
আরেকটি ঘটনা
তাফসীরে কাবীর শরীফের মধ্যে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আলোচনায় তাফসীরকারক লিখেছেন-ফেরআউন তাঁর খোদায়িত্বের দাবীতে প্রথমে একটি ঘর বানিয়েছিল। আর এই ঘরের বহির্দরজায় লিখেছিল “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। যখন সে খোদায়িত্ব দাবী করল এবং মুসা আলাইহিস সালাম তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন আর সে কবুল করল না। তখন মুসা (আ) তার ওপর বদ্ দোয়া করলেন। ওহী আসল, হে মুসা! এটাই ফায়সালা যে, তাকে ধ্বংস করে দেয়া হবে; কিন্তু তাঁর দরজায় (বিসমিল্লাহ) লেখা রয়েছে, যার কারণে সে বেঁচে গেল। এ জন্যই ফেরাউনের ঘরে আযাব আসল না; বরং সেখান থেকে বের করে সাগরে ডুবিয়ে দেয়া হল। একজন কাফিরের ঘর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর ওসীলায় বেঁচে গেল। সুতরাং যদি কোন মুসলমান স্বীয় অন্তরে ও মুখে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পড়ে নেয় তাহলে কেন সে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচবে না? অবশ্যই রক্ষা পাবে।
ওলামায়ে কেরামদের অভিমত হল “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর মধ্যে ইসমে আজম এতোই নিকটবর্তী যে, যেমন চোখের কালো ও সাদা অংশের মধ্যে দুরত্ব।
শামছুল মুয়ারিফুল কোবরায় আছে, হযরত আকরামা (রা) থেকে বর্ণিত যে, সর্ব প্রথম আল্লাহ তা’য়ালা একা ছিলেন। কোন কিছুই তখন ছিল না। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। তখন আল্লাহ তা’য়ালা সর্ব প্রথম নূর সৃষ্টি করলেন। তারপর লৌহ ও কলম সৃষ্টি করলেন এবং কলমকে হুকুম করলেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে তা লৌহের মধ্যে লিপিবদ্ধ কর। কলম লৌহের মধ্যে শুরুতেই লিখেছিল “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”।
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আদম (সা) এর উপর প্রথম নাজিল হয়। আদম সৃষ্টির সময় তাঁর পেশানীর উপর লিখা হয় “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। আদম (আ) এর ওফাতের পরই “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াতকে আসমানে তুলে নেয়া হয়। যখন হযরত ইব্রাহিম (আ) নমরুদের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হন, তখন আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিবরাঈল (আ) ইব্রাহিম (আ) এর উপর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” নাজিল করেন এবং নমরুদের অগ্নিকুন্ড ইব্রাহিম (আ) এর জন্য শান্তিদায়ক ঠান্ডায় পরিণত হয় এবং ফুলের বাগান তৈরি হয়। ইব্রাহিম (আ) এর ইন্তিকালের পর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াতটিকে আবারো আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়। “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” হযরত সোলেমান (আ) এর উপর নাজিল হয়। সোলেমান (আ) এর আংটির মধ্যে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখা ছিল। তার ইন্তিকালের পর আবার এটাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়। “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” হযরত মুসা (আ) এর উপর নাজিল হয় এবং মুসা (আ) এর লাঠির মধ্যে ছুরইয়ানী ভাষার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখাছিল। তার ইন্তিকালের পর এটা আবারো আসমানে চলে যায়। “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” হযরত ঈসা (আ) এর উপর নাজিল হয়। এমন কি হযরত ঈসা (আঃ) এর জিহবার মধ্যে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” লিখিত ছিল। যে কারণে তিনি জন্মের পরই কথা বলেছিলেন। অবশেষ মহানবী (সাঃ) এর উপর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” নাজিল হয় এবং আল্লাহ তা’য়ালা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” কে কিয়ামত পযর্ন্ত দায়িম ও কায়িম রাখেন। এজন্য কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ পযর্ন্ত আমরা “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” আয়াত হতে ফায়েদা হাসিল করতে থাকব।
একটি চমংকার ঘটনা
তাফসীরে কাবীর শরীফের তাফসীরকারক “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আলোচনায় একটি চমংকার ঘটনা লিপিবিদ্ধ করেছেন যে, একজন ভিক্ষুক একজন বড় সম্পদশালী ব্যক্তির দ্বারপ্রান্তে আসল এবং কিছু চেয়ে বসল আর সেই আলীশান দরবার থেকে সামান্য কিছু জিনিস পেল। ফকীর তা নিল এবং চলে গেল। দ্বিতীয় দিন সেই ফকীর একটি খুব শক্ত কোদাল নিয়ে আবার আসল এবং দরজা কুঁড়তে লাগল। মালিক বললেন, তুমি একি কাজ করছ? ফকীর বলল, হয়তো দান-খয়রাতকে দরজার সমমর্যাদাপূর্ণ উপযুক্ত করুন, না হলে দরজাকে দান-খয়রাতের সমমানের করুন। অর্থাৎ দরজা যেহেতু এত বড় বানিয়েছেন সুতরাং এর উপযুক্ত মর্যাদা হল বড় দরজা থেকে বড় ভিক্ষাই বের হবে। কেননা, দান-খয়রাত ইত্যাদি দরজা ও নামের উপযুক্ত হওয়া চাই। আমরাও আল্লাহর দরবারে আরয করি যে, হে মাওলা! আমাদেরকে আমাদের ফকীরের মর্যাদা অনুযায়ী দিওনা; বরং আপনার দান বখশিশের মর্যাদা অনুযায়ী দিও। নিঃসন্দেহে আমরা পাপী কিন্তু আপনার ক্ষমাশীলতা আমাদের পাপীত্বের চেয়েও বড়।
অনলাইনে ফ্রি ইনকাম করার পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন
তাফসীরে কাবীরের শুরুতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর আলোচনায় রয়েছে যে, মহান আল্লাহর ৩ হাজার নাম রয়েছে। তা থেকে ১ হাজার নাম ফেরেস্তারা জানেন, ১ হাজার নাম আম্বিয়া-ই কিরাম জানেন, অবশিষ্ট ১ হাজার নামের মধ্যে ৩০০ টি নাম তাওরাতের মধ্যে, ৩০০টি নাম ইঞ্জিলের মধ্যে, ৩০০টি নাম যাবুরের মধ্যে উল্লেখিত হয়েছে। আর নিরানব্বইটি নাম কোরআন মজিদের মধ্যে রয়েছে। আর একটি নাম তাই যা শুধু মহান আল্লাহই জানেন। তবে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর মধ্যে মহান আল্লাহর যে ৩টি নাম এসেছে এই ৩টির মধ্যে সেই ৩ হাজার নামের অর্থ পাওয়া যায়।
একটি জ্ঞানগর্ভ আলোচনা
রাহমান ও রাহীম শব্দদ্বয়ের অর্থ
রুহল বয়ান ও তাফসীরে কাবীরে বিশ্লেষন করা হয়েছে যে, রাহমান হচ্ছেন তিনিই যিনি কোন মাধ্যম ব্যতিরেকে রহম বা দয়া প্রদর্শন করেন। আর রাহীম হচ্ছেন তিনি যিনি কোন মাধ্যম দ্বারা বান্দাদেরকে করুণা করেন। হযরত যুননুন মিশরী (র) বলেন- একদিন আমি নীল নদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। প্রতি মধ্যে দেখলাম যে, একটি বিচ্ছু দ্রুত নদীর দিকে এগুচ্ছে। বিচ্ছুটি যখন নীল নদের ধারে পৌছালো হঠাৎ একটি কচ্ছপ নদীর ধারে আসল। বিচ্ছুটি এর উপর সওয়ার হল আর কচ্ছপ একে বহন করে নদীর এপার থেকে ওপারে নিয়ে গেল। আমার এ বিষয়টি জানার জন্য আগ্রহ জাগল যে, আমি দেখব, এ কচ্ছপটি বিচ্ছুটিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। অত:পর আমি নৌকা দিয়ে কচ্ছপকে অনুস্বরণ করতে লাগলাম। দেখলাম যে, বিচ্ছুটি যখন ওপারে গিয়ে পৌছল তখন কচ্ছপ লেকে নেমে গিয়ে সামনের দিকে দ্রুত গতিতে চলতে লাগল। আমিও তার অনুস্বরণ করতে লাগলাম। কিছু দুর গিয়ে দেখলাম একটা যুবক ঘুমাচ্ছে এবং তারপাশে একটা বিশধর সাপ। যুবকটিকে সাপে দংশন করতে চাচ্ছিল। এমতাবস্থায় বিচ্ছুটি সাপটিকে আক্রমন করল আর সাপও বিচ্ছুটিকে পাল্টা আক্রমন করল। তারপর উভয়ই পরস্পরের আক্রমন ও দংশনের বিষে মারা গেল। কিন্তু যুবকটি বেঁচে গেল। আর এটাই হল ‘রাহীম’ নামের গুণের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এভাবেই আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে কোনো না কোনো মাধ্যমে সাহায্য করে থাকেন।
কেউ কেউ বলেন ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর মধ্যে যে ‘আল্লাহ’ শব্দ আছে, এটাই হল ইসমে আজম।
(প্রথম পর্ব সমাপ্ত)
লেখক: হযরত মাওলানা ক্বারী মো: নজরুল ইসলাম সাহেব, ভাদেশ্বরী। (এমএম, এমএ)
যোগাযোগ: ০১৭১৬-৩৮৬৯৫৮, nazruld@yahoo.com